সবুজ অরণ্য। চট্টবাংলা প্রতিনিধি -ঃ
সারাদেশে যখন গাণিতিক হারে বাড়ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সারি।
তখনই করোনাদুর্গতদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে একটি মানবিক সংগঠন ”Auction 4 Acton” উদ্যোগ গ্রহণ করে তহবিল সংগ্রহের।
গত বুধবার (৬ মে ২০২০) রাত সাড়ে দশটায় কবি নির্মলেন্দু গুণের হাতে লেখা ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন’ কবিতার পান্ডুলিপিটা নিলাম করেন সংগঠনটি। বরেণ্য কবির কবিতাটি সেই নিলামে ৯৯,৯৯৯ টাকায় বিক্রি হয়। কবিতাটি ক্রয় করেন গুলশানের বাসিন্দা সায়মা মাশরুর।
নিজের লেখা কবিতার পান্ডুলিপি নিলামে বিক্রির বিষয়ে কবি তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, করোনাদূর্গত মানুষকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে একটি মানবিক ত্রাণ সংগঠন অন লাইনে নিলামে বিক্রি করার জন্য আমার কাছে আমার একটি হস্তলিখিত কবিতার পান্ডুলিপি চেয়েছিলো। প্রথমে আমি রাজি হইনি।ভেবেছিলাম যদি আমার কষ্ট করে কাগজের ওপর কলম দিয়ে লেখা কবিতাটি বিক্রি না হয়, কেউ যদি কবিতাটি কিনতে আগ্রহী না হয়? তবে তো আমার জন্য তা খুবই লজ্জার বিষয় হবে।
আমি মেয়েকে বললাম, আমার কবিতা তো সাকিবের ব্যাট নয়।
ঐ সংগঠনের পক্ষ নিয়ে আমার মেয়ে (মৃত্তিকা গুণ) আমাকে বললো, তুমি দাও। বিক্রি না হলে না হবে। এখন তুমি যদি না দাও, তো নিলামে বিক্রি করে ফান্ড তৈরি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণকারীরা ভাববে, তুমি ঐ সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতা করলে না। হ্যাঁ, তা ভাবতে পারে।
এই ভেবে আমি অনেক কষ্ট করে মোটা কাগজের ওপর একটু মোটা শিসের কলম দিয়ে আমার একটি মাঝারি আকৃতির জনপ্রিয় কবিতা লিখে কবিতাটির ছবি তুলে আমার মেয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। আমার মেয়ে দ্রুতই আমার হস্তলিখিত ঐ কবিতার পান্ডুলিপির একটি ফটো-কপি উদ্যোক্তাদের কাছে ইমেইলে পাঠিয়ে দিলো। ফেসবুকের চেয়ে ইমেইলে ছবির রেজুলুশান ভালো হয় বলে।
প্রসঙ্গত, ঐ দিনই সমাজের বিভিন্ন সেলিব্রেটির কাছ থেকে পাওয়া সামগ্রীসমূহ নিলামে তোলার শেষ দিন ছিলো। রাত বারোটার দিকে আমার মেয়ে আমাকে ফোন করে বললো, বাবা, তোমার কবিতাটির জন্য তুমি কতো টাকা আশা করেছিলে? আমি বললাম, এক লাখ টাকা।
তাই? তুমি তো দেখছি খুবই দূরদর্শী।
তোমার আশা তো প্রায়ই পূর্ণ হয়েছে।
আমি বললাম, তবে প্রায়ই বলছো কেন? এক লাখ হয়নি? মেয়ে বললো, না, তোমার কবিতাটি বিক্রি হয়েছে ৯৯ হাজার টাকায়।
আমি খুব প্রাণ খুলে হাসলাম। বুঝলাম, যিনি কবিতাটি কিনেছেন, তাঁর হয়তো 0 সংখ্যাটি নিয়ে এলার্জি আছে। তাই ১০০০০০ লাখের পরিবর্তে তিনি আমার কবিতাটির দাম হাঁকিয়েছেন ৯৯,০০০ হাজার।
আমি আবার তাকে প্রশ্ন করি, উদ্যোক্তারা কি খুশি? মেয়ে বললো, হ্যাঁ। ওরা খুব খুশিমনেই আমাকে এই খবরটা দিলো।
বরেণ্য কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতার পান্ডুলিপি নিলামে বিক্রির আয়োজক সংগঠন তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে লিখেন, “আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সায়মা মাশরুরকে এই কবিতা ক্রয়ের মাধ্যমে করোনাদুর্গতদের সাহায্য জন্য অভিবাদন জানাই”। আমরা শ্রদ্ধা জানাই কবিকে। তাঁর হাতে লেখা পান্ডুলিপি আমাদের সংগঠনের তহবিল সংগ্রহে দান করার জন্য। ধন্যবাদ কবি কন্যা মৃত্তিকা গুণ। আমাদের আয়োজনে সহযোগিতার জন্য।
তবে সায়মা মাশরুর কবিতাটি ৯৯,৯৯৯ টাকায় নিলাম হলেও তিনি দিয়েছেন ১,০০,০০০/ (এক লক্ষ) টাকা। পরবর্তীতে এই টাকা অর্ধেক করে দুটি ফাউন্ডেশনের হাতে তুলে দেন Auction 4 Acton-এর পরিচালক অরিফ হোসেইন।
ফাউন্ডেশন দুটি হলো- বন্ধু ফাউন্ডেশন (যারা যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করেন) ও লাইফ স্টক অ্যাডভান্সমেন্ট (যারা মালিকানাহীন কুকুর ও বিড়াল নিয়ে কাজ করেন)।
উল্লেখ্য, Poem Vein Bangla সূত্রে জানা যায়
বাংলাদেশ জন্মের পর থেকে এই প্রথম কোনো হাতে লেখা কবিতা নিলাম বিক্রি হল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবি কন্যা চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি মৃত্তিকা গুণ বলেন, আমরা খুব আনন্দিত। আমার বাবার হাতে লেখা পান্ডুলিপি নিলামে বিক্রির মাধ্যমে করোনাদূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে। এমন একটি মহৎ কাজে আমাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আয়োজক প্রতিষ্ঠান ”Auction 4 Acton” কে।
আমরা আরো বেশি আনন্দিত এবং গর্ববোধ করছি। আমাদের পরিবার আরো একটি ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরেছে বলে। কারণ বাংলাদেশ জন্মের পর এই প্রথম কোন কবির কবিতা নিলামে বিক্রি হলো।
তথ্যসূত্র ও ছবি কৃতজ্ঞতায়- আশুতোষ সুজন।
পরিচালক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবির জামাতা।।