শনিবার , অক্টোবর ৫ ২০২৪
শিরোনাম
Home / জনতার কথা / ক্ষুধার্তরা উন্নয়ন বুঝেনা খুঁজে একমুঠ ভাত বন্ধ কেন কানুনগোপাড়ার শ্যামরায় হাট

ক্ষুধার্তরা উন্নয়ন বুঝেনা খুঁজে একমুঠ ভাত বন্ধ কেন কানুনগোপাড়ার শ্যামরায় হাট

(জনতার কথা)

অনুপম বড়ুয়া পারু

ব্যাপক পরিকল্পনা, সঠিক বাস্তবায়ন ও তদারকির
মাধ্যমেই গ্রামীন মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন করা সম্ভব। সেই চিন্তাচেতনার আলোকে সবদিক বিবেচনা করেই জননেত্রী শেখ
হাসিনা হয়তো স্বপ্ন দেখেছিলেন গ্রামকে করবে শহর। সেই ধারাবাহিকতায় সরকারের ব্যাপক উন্নয়নে সারা দেশের ন্যায় চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলা, থানা ও ইউনিয়নে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। হয়েছে পরিবর্তন।

এক সময় গ্রামীন মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ছিল না।
ছিল না উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। নানান প্রতিকুলতা
পেরিয়ে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়ায় প্রতিটি গ্রাম নগরায়নে রুপান্তরিত হয়েছে। হয়েছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন।

সেই দিনের অন্ধকারছন্ন গ্রামগুলো আজ যেন আলোর সাথে মিতালি করছেন। শহরমুখী মানুষ ও গ্রামের দিকে ছুটছে সরকারের উন্নয়নে শামিল হতে। এই উন্নয়নের স্রোতধারা থেকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীও কিন্তু ব্যতিক্রম নয়।

শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সহ মুক্তিজননী রমা চৌধুরীর কুড়ে ঘর থেকে আলোকবর্তিকা প্রস্ফুটিত হয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পীর চারণভূমিতে রত্নগর্ভা মুক্তকেশী সহ অসংখ্য জ্ঞানী – গুণী মানুষের জন্মে আলোকিত চট্টগ্রামের বোয়ালখালী।

সম্প্রতি রাস্তার জ্যাম এর অযুহাতে বোয়ালখালীস্থ কানুনগোপাড়ার শ্যামরায় হাট প্রকাশ (কানুনগোপাড়া বাজার) বন্ধ করে দিয়েছেন বোয়ালখালীর উপজেলা প্রসাশন। মানুষের যাতায়াত, যানবাহন চলাচলের অসুবিধার কারণে হয়তো প্রসাশনের এই উদ্যোগ।।যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুন্দর ও আধুনিকায়ন করার প্রয়োজন।
কিন্তু, হঠাৎ করে এতগুলো মানুষের আয় -উপার্জন বন্ধ হলে তাদের কি অবস্থা হবে সেটাও তো ভেবে দেখা উচিত। মানুষের কল্যাণে যেই কাজ সেটাই উন্নয়ন। উন্নয়ন মানেই সৃষ্টি, ধ্বংস নয়। এই শ্যামরায় হাট একদিন কিংবা দুদিনে সৃষ্টি হয়নি। হাজারো মানুষের জীবন জীবিকার স্বপ্নে গড়ে উঠেছে এই হাট।

নানান নামকরণে বোয়ালখালীতে অনেক গুলো
হাট – বাজার রয়েছে। অনেক বছরের প্রামীন ঐতিহ্যকে ঘিরে এক একটা হাটের সৃষ্টি। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বোয়ালখালীতে অনেক হাট-বাজার আজ বিলীন হয়েছে শুধুমাত্র তদারকির অভাবে। অথচ বাজার বসার নির্দিষ্ট স্থান থাকার পরও কেন বাজারগুলো বন্ধ হয়েছে সেদিকে কারও নজর পড়েনি। নজর পড়েছে শ্যামরায় হাটে । তাও রাস্তা জ্যাম এর অভিযোগ। অথচ করোনাকালীন সময়েও পাশের স্কুল মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছিল সাময়িক ভাবে।এরপরও শ্যামরায় হাট বন্ধ হয়নি। হঠাৎ করে রাস্তা জ্যামের অজুহাত দেখিয়ে হাট বন্ধ করার আগে বিক্রেতাদের পূর্ণবাসন করা কি প্রসাশনের উচিত ছিল না?

কোন ভালো কাজের মধ্য যদি অনিয়ম বা অসংগতি ঘটে তখন দেখা যায় অন্য কাজগুলো মুখথুবড়ে পড়ে। যেমনটি দুধের মাঝে টক দেওয়ার মত। কোন কথা নেই, বার্তা নেই বাজার বসা বন্ধ। এতগুলো বিক্রেতাদের পূর্ণবাসন করা ছাড়া প্রশাসণের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া কি উচিত হয়েছে।

যে হাট থেকে প্রতিদিন জৈষ্ঠ্যপুরা, খরণদীপ,শ্রীপুর
পোপাদিয়া, আমুচিয়া, করলডেঙ্গা,সারোয়াতলী সহ ধলঘাটের মানুষেরা বাজার করার ফলে শত শত বিক্রেতারা তাদের পরিবার – পরিজন নিয়ে সুখের স্বপ্ন দেখতেন। অর্থ উপার্জন করতেন। আজ তারাই চরম সংকটে।

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে নিকটবর্তী এলাকা এই বোয়ালখালী উপজেলা। বোয়ালখালী থেকে কালুরঘাট সেতু দিয়ে শহরের পার হতেই কাজিরহাট বা কামাল বাজার, বদ্দারহাট, চকবাজার সহ নগরীতে রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা বাজার গুলো কি প্রশাসনের চোখে পড়ে না ? এখানে কি রাস্তা জ্যাম বা যান চলাচলের সমস্যা হয় না। নিশ্চয়ই হয়। শুধুমাত্র বিক্রেতাদের পূর্ণবাসনের অভাবে হয়তো নিরভ প্রশাসন ও চসিক। এটা চসিক কিংবা প্রশাসনের অবহেলা নয়। এটাই মানবিকতা। লোকে বলে মুখে দিলে – পিঠে সয়। এখন দেখি, মুখে না দিলেও ফিঠে সয়। হাট বন্ধ মানে শত শত বিক্রেতাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এই ভাবে চলতে থাকলে থমকে যাবে তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া। ছেলে – মেয়েরা ছুটে আসবে সামাজিক অবক্ষয়ে।

এটা কি উন্নয়ন? নাকি পরিকল্পনার অভাব? এত বছর পর রাস্তা জ্যামের অজুহাতটি কতটুকু যৌক্তিক? আর সত্যিই যদি সমস্যা হয় বোয়ালখালীর ফুলতল বা উপজেলা সদরের মত শ্যামরায় হাটের বিক্রেতাদের পূর্ণবাষন করা হয়নি কেন? যে প্রশাসন কাজ করবে জনগণের কল্যাণের জন্যে। সেই প্রশাসন যদি জনবিরোধী কাজ করেন জনগণ তা কিভাবে দেখবেন?

গ্রামীন কৃষকের খামারে উৎপাদিত শাকসবজি। নিত্য প্রয়োজনী তরিতরকারি, পুকুর থেকে
টাটকা মাছ তুলে এনে হাটে বিক্রি করে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখেই তো ছিল। ছাড়াও বিভিন্ন সমিতির থেকে নেওয়া ধারদেনা পরিষোধ করতে হাটই ছিল একমাত্র অবলম্বন। সেটা থেকেও আজ তারা বঞ্চিত। অন্যদিকে এই হাটের কারণে দোকানিরা পেতো বাড়তি ক্রেতা। হাটে বাজার করতে এসে কেউ লুঙ্গি, শাড়ি, গেঞ্জি, শার্ট ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনী জিনিসপত্র ক্রয়ের কারণে দোকানিদের যে ভারতি আয় হতো। তারা হারিয়েছেন ভাড়তি ইনকামের সুযোগ। বাজার বন্ধ হওয়াতে বেড়েছে মানুষের ভোগান্ত। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ। আগে প্রয়োজন তাদের পূর্ণবাসনের। কারণ ক্ষুধার্তরা উন্নয়ন বুঝেনা। খুঁজে একমুঠ ভাত।