সবুজ অরণ্য। চট্টবাংলা প্রতিনিধি-ঃ
লেখক হুমায়ুন আজাদ। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, কিশোর সাহিত্যিক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক। পেশাগত জীবনে ছিলেন অধ্যাপক। আমৃত্যু পালন করে গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব। প্রথাবিরোধী এ লেখকের ৭৩ তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের আজকের এদিন অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেণ তিনি।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক। যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কার বিরোধিতা, যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্যের জন্য ১৯৮০- এর দশক থেকে পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
হুমায়ুন আজাদের রচিত ৭টি কাব্যগ্রন্থ। ১২টি উপন্যাস। ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ। ৭টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ। ৮টি কিশোরসাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধসংকলন মিলিয়ে ৬০টিরও অধিক গ্রন্থ তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হয়।
হুমায়ুন আজাদ ১৯৯২ সালে তাঁর নারীবাদী গবেষণা-সংকলনমূলক গ্রন্থ ” নারী” প্রকাশের পর পাঠক নন্দিত হলেও এক শ্রেণীর পাঠকের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সাড়ে চার বছর ধরে বইটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ করে রাখা হয়। এটি তাঁর বহুল আলোচিত এবং গবেষণামূলক কাজ হিসাবেও স্বীকৃত।
এছাড়াও তাঁর “পাক সার জমিন সাদ বাদ” উপন্যাসটি পাঠকমহলে সমাদিত হলেও বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। তাঁর রচিত প্রবচণ সংকলন ১৯৯২ সালে “হুমায়ুন আজাদের প্রবচণ গুচ্ছ” নামে প্রকাশিত হয়। তাকে ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং ভাষাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়।
এছাড়া ২০০৩ সালে তাঁর রচিত কিশোর সাহিত্য ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা (১৯৮৫) এবং আব্বুকে মনে পড়ে (১৯৯২) জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছিলো।
অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল কামারগাঁ, শ্রীনগর, বিক্রমপুর (বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ), ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ) এ পিতা-আবদুর রাশেদ আর মাতা জোবেদা খাতুন এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলা বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করার পর ভাষাবিজ্ঞান নিয়ে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে সংসার পাতেন লতিফা কোহিনূর সাথে (১৯৭৫) সালে। সন্তান মৌলি আজাদ, স্মিতা আজাদ,অনন্য আজাদ। ২০০৪ সালের ১১ আগষ্ট মাত্র ৫৭ বছর বয়সে মৌলবাদীদের হাতে আক্রান্ত হয়ে জার্মানির মিউনিখে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন তিনি।
হুমায়ুন আজাদ প্রথাগত ধ্যানধারা সচেতনভাবে পরিহার করতেন। তার সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য পল্লীপ্রেম, নর-নারীরপ্রেম, প্রগতিবাদিতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা। তাঁর লেখায় স্থান পেয়েছে সামরিক শাসন ও একনায়কতন্ত্রের বিরোধিতা। তিনি বিশেষভাবে নারীবাদের জন্য পরিচিত। তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত অভীষ্ট তার সাহিত্যকে প্রভাবান্বিত করেছিল।
কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর রচিত “পাক সার জমিন সাদ বাদ ” উপন্যাসে মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে ২০০৪ সালে তিনি হামলার শিকার হন।
“অলৌকিক ইস্টিমার” কবি হুমায়ুন আজাদ রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এছাড়া তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, সব কিছু ভেঙে পড়ে, নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু, একটি খুনের স্বপ্ন, ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল উল্লেখযোগ্য।
তথ্যসূত্র ও ছবি-ঃ নারী এবং উইকিপিডিয়া।