ঝুপড়ির ছোট্ট লাইব্রেরি থেকে ধার করে এনে পড়ে শেষ করলাম। আমাদের বন্ধু শান্তনুর বই। সম্ভবত প্রথম দিকের বই; প্রথমটা ২০১০ সালে, ২য়টা ২০১১ সালে প্রকাশিত। মুখবন্ধ লিখেছেন প্রিয় লেখক – কার্টুনিস্ট, বাংলাদেশের ৩ রত্নের ১ রত্ন উন্মাদের সম্পাদক আহসান হাবীব। দেখলাম শান্তনুর সাথে দুষ্টামিও করলেন তাতে। মজার কথা শান্তনু হুমকি দিয়েছে মুখবন্ধ লিখে না দিলে আহসান হাবীবের সাক্ষাৎকার বিখ্যাত মানুষদের সাক্ষাৎকার থেকে বাদ দিবে। আবার ২য় বইয়ে লিখলেন- আগের বইকে হিট করাতে ওর এই দ্বিতীয় গ্রন্থ।
কথা প্রসঙ্গে-ঃ
=========
এই বইতে বাংলাদেশের সাহিত্য,ক্রীড়া,সংগীত, সংস্কৃতির আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রদের ছোট ছোট মজার সাক্ষাৎকার। অনেক সাক্ষাৎকার হুট করে শেষ হয়ে যাওয়া- সৈয়দ শামসুল হক, সেলিনা হোসেন, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক, কবি মহাদেব সাহা, নাসরীন জাহান, কবি আসাদ চৌধুরী, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, রনবী, আহসান হাবীব, লুৎফর রহমান লিটন, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, নায়িকা কবরী, লালন গানের রাণী ফরিদা পারভীন, ক্যামেরার শিল্পী নাসির আলী মামুন, পপ সম্রাট আজম খান, রান্নার বিজ্ঞানী সিদ্দিকা কবীর, কবি শামসুর রাহমান, বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী, রোকজানা খ্যাত গায়ক সাহেদ, বীরংগনা রমা চৌধুরী, হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল এবং উনাদের প্রেরণা দায়ী মা আয়েশা ফয়েজ।
পড়লে মনে হবে, সবতো আগে কোথাও পড়েছি। কিন্তু পাতার পর পাথায় কি রস-কেবল পড়লে বুঝা যায়।
শান্তুনু চৌধূরী। শব্দশৈলীর মায়াজালে পাঠককে আকৃষ্ট করে রাখার আর্চয্য এক ক্ষমতাধর লেখক ৷ মন্ত্রমুগ্ধের মত পাঠককে বইয়ের পৃষ্ঠা হজম করানোর মায়াশক্তি যেমন তার আছে, তেমনি আছে কথার জালে আটকে রেখে অজানা কথা বের করে আনার লেখনী শক্তিও। যেমন-
প্রথম বইয়ে-ঃ
========
১) হুমায়ুন আহমেদকে জিজ্ঞেস করলঃ চুলে
কলপ কেন ? উনি উত্তর দিলেন, আমি অল্প
বয়েসী একটা মেয়েকে বিয়ে করেছি। তার
সামনে পাকা চুল নিয়ে ঘুরতে ভাল লাগে না।
২) অসংখ্য প্রেমের সফল উপন্যাস লিখেও
ইমদাদুল হক মিলন বলেন-প্রেমের উপন্যাস
লিখতে ভাল লাগে না।
৩) কবি মহাদেব সাহা গোসল করতে গিয়ে
বাথরুমে কাটান ৩ ঘন্টা।
৪) প্রিয় কবি আসাদ চৌধুরী পান খেয়ে খেয়ে
বলেন উনার গোটা পাঁচেক জিন্স আছে যা
এই বয়েসেও উনি পরেন।
৫) আনিসুল হক গ্রামে গিয়ে মেয়ের সাথে গাছে
চড়েন। উনি নৌকা বাইতে পারেন এবং গরুর
গাড়ি চালাতে পারেন।
৬) কবি সমূদ্র গুপ্ত গোঁফের জন্য বিখ্যাত
ছিলেন। পরতেন ৩ পকেট ওয়ালা শার্ট।
৭) আহসান হাবীবের উন্মাদের অফিসে তাঁর
মাথার উপর কাটা হাত ঝুলছে।
৮) মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর বাবা মুক্তিযুদ্ধে
শহীদ হয়েছেন।
৯) যে ফরিদা পারভীন একসময় লালন
সংগীতকে অপছন্দ করতেন, পরে তিনিই
কিনা হলেন লালনের গানের সম্রাজ্ঞী।
১০) নাসির আল মামুন আমেরিকার
প্রেসিডেন্সিয়াল এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে
বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংকে
বল্লেন- Sir, can I have a picture Dr
Younus with you? তিনি বল্লেন- Yes.
নাসির আলী মামুন ঘোরের মধ্যে ছিলেন,
পরে বুঝতে পারেন যে আওয়াজ শুনলেন তা
স্টিফেন হকিং এর নিজের গলার আওয়াজ
নয়,উনার ইচ্ছা আওয়াজ কম্পিউটার করে
দিয়েছে যেহেতু উনি মটর নিউরন রোগে ভুগে
চলার শক্তি, কথা বলার শক্তি হারিয়েছিলেন।
তবুও এই অসাধারণ মহান বিজ্ঞানী জ্ঞান
বিজ্ঞানকে আলোকিত করে গেছেন।
১১) কমলাপুরে পপ সম্রাট আজম খানের
বাড়িতে গেলে উনি ডাক দিয়ে বলেন,
” ওই মিয়া, খাটে উইঠ্যা বসো”।
১২) রোকজানা খ্যাত শাহেদ এক কাপড়ে
কাটিয়েছেন ৬ বছর, কাপড়ের ছেড়া অংশ
ঢাকার জন্য পকেটে সুই সুতা নিয়ে নিয়ে
ঘুরেছেন।
২য় বইয়ে-ঃ
========
এই বইয়ের পাত্রপাত্রী সবাই স্বনামে জাতীয়ভাবে খ্যাত কিন্তু সবার বাড়ি চট্টগ্রাম বা কারো শ্বশুর বাড়ি চট্টগ্রাম বা কারো জীবনের বিশাল একটা অংশ চট্টগ্রামে কাটিয়েছেন। চট্টগ্রামের সে সময়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সবাই মুগ্ধ ছিলেন। এখন আফসোস করেন-সেই সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে বলে। এই বই না পড়লে জানতেই পারতাম না নাগরিক টিভির সিইও এবং শুভেচ্ছা খ্যাত ডাঃ আব্দুন নুর তুষারের বাড়ি সাতকানিয়া, নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফের বাড়ি সীতাকুণ্ড, বিখ্যাত দাবাড়ু নিয়াজ মোর্শেদ এর বাড়ি মীরসরাই, প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন স্যারের শৈশব কেটেছে চট্টগ্রাম।
আরো জানতে পারতামনা,মজার মজার কথা। যেমন কলেজিয়েট স্কুলের এক স্যার প্রিয় অভিনেতা আবুল হায়াত এবং উনার বন্ধুদের “আদরের মার” দিতেন। একদিন ব্ল্যাক বোর্ডে স্যার পিছন ফিরে লিখছেন, এক ছাত্র বলে উঠল-
“ওডা, কোয়াইশ করে লেখ”। এর পর থেকে স্যারের নাম হয়ে গেলো আব্দুল কোয়াইশ।
শান্তনুর প্রতি বইমেলায় বই বের হয়। ভাবছি সব পড়ে ফেলব। এখন সে ইউটিউবের ওর চ্যানেলের জন্য মজার মজার ভিডিও বানাচ্ছে। শান্তনু চৌধুরী বর্তমানে “সময় টিভি” তে বার্তা সম্পাদক হিসাবে কর্মরত আছে। ভালবাসা বন্ধু।