এই বিখ্যাত এ-অভিনেত্রীর পুরো নাম নূতন সমর্থ বাল। ১৯৩৬ সালের আজকের এইদিনে (৪ জুন) তত্কালীন বোম্বে প্রেসিডেন্সির মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিখ্যাত এই ভারতীয় অভিনেত্রী নূতন নামেই দর্শকমহলে সমধিক পরিচিত ছিলেন।
চার দশককাল সুদীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনে তিনি ৭০-এর অধিক হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁকে হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা পরিচ্ছন্ন নারী অভিনেত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
বিশিষ্ট পরিচালক ও কবি কুমার সেন সমর্থ এবং তাঁর অভিনেত্রী পত্নী শোভনা সমর্থের চার সন্তানের মধ্যে জোষ্ঠ এবং মারাঠি পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি
তনুজা ও চতুরা নাম্নী ছোট দুই বোন এবং এক ভাই ছিল। তন্মধ্যে তনুজা সফল অভিনেত্রী ছিলেন। শৈশবেই বাবা-মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরবর্তীকালে তনুজা’র কন্যা ও বোনঝি কাজলও সফল অভিনেত্রীর মর্যাদা লাভ করেছেন।
অভিনয় জীবনে নূতনের সাথে গত পঞ্চাশ বছরে অগণিত চলচ্চিত্র তারকার সাথে জানাশোনা ছিল। ১৯৫০ সালে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে “হামারি বেটি” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মায়ের হাত ধরে অভিনয়ে হাতে খঁড়ি হয় তাঁর। মা শোভনা সমর্থ ছিলেন চলচ্চিত্রটির পরিচালক।
এরপর নাগিনা ও হামলোগে ধারাবাহিকভাবে ১৯৫১ সালে অভিনয় করেন। ১৯৫২ সালে তিনি মিস ইন্ডিয়া শিরোপা জয় করেন। ১৯৫৫ সালে সীমা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। সীমা চলচ্চিত্রে অনবদ্য ভূমিকার কারণে তিনি প্রথমবারের মতো সেরা অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। তিনি তাঁর এ সফলতা ধরে রাখেন আবেগধর্মী “পেয়িং গেস্ট” চলচ্চিত্রেও। এ চলচ্চিত্রে তাঁর নায়ক ছিলেন দেব আনন্দ।
১৯৫৯ সালে রাজ কাপুরের সাথে “আনারী” ও বিমল রায়ের “সুজাতা” চলচ্চিত্রে সুনীল দত্তের সাথে অভিনয় করেন। দুটো ছবিই দর্শকমহলে সাড়া জাগায়। এছাড়া ১৯৬০ ও ২৯৭০-এর দশকে চালিয়া, স্বরস্বতীচন্দ্র, দেবী ও মে তুলসী তেরে অঙ্গন কি’র ন্যায় চলচ্চিত্রগুলো সফলতা লাভ করে।
১৯৬০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মনমোহন দেশাইয়ের চালিয়ায় রাজ কাপুরের বিপরীতে পুণরায় অভিনয় করেন। ছবিতে তাঁর চরিত্রের অভিনয়ের কারণে আরও একবার ফিল্মফেয়ার কর্তৃক মনোনীত হন। ঐ সময়ে চলচ্চিত্রটি পর্যালোচনা করে ফিল্মফেয়ার লিখেছিল যে, ‘ভাগ্যবঞ্চিত বালিকা কোন দোষ না করা স্বত্ত্বেও প্রতিবেশীদের দ্বারা উপেক্ষিত হয়।
এতে নূতন চমত্কারভাবে নিজেকে যথোচিত উপস্থাপনার মাধ্যমে নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। চিত্রতারকা দেব আনন্দের সাথে জনপ্রিয় জুটি গড়েন। তাঁরা সর্বমোট চারটি চলচ্চিত্রে অংশ নেন।
কেন্দ্রীয় চরিত্রে ১৯৬০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৭০-এর দশকের শেষদিক পর্যন্ত দৌর্দণ্ড প্রতাপে রাজত্ব কায়েম করেন। এ-সময়ে তিনি সুজাতা, বন্দিনী, মিলন এবং মে তুলসী তেরে অঙ্গন কি চলচ্চিত্রসমূহে অভিনয়ের জন্য আরও চারবার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।
এছাড়াও ঐ সময়ে আনারী, চালিয়া, তেরে ঘর কে সামনে, স্বরস্বতীচন্দ্র, অনুরাগ এবং সওদাগর চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকমহলে সাড়া জাগান। ১৯৮০ -এর দশকে চরিত্রধর্মী অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন ও মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত অভিনয় চালিয়ে যান।
এ সময়ে তাঁর অভিনীত অধিকাংশ চরিত্রই মাতৃপর্যায়ের ছিল। তন্মধ্যে ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মেরি জাং চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের কারণে ষষ্ঠ ও সর্বশেষ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান। তবে এ পুরস্কারটি ছিল সেরা সহ অভিনেত্রী বিভাগের পুরস্কার।
১৯৮৯ সালে জীবিত থাকাবস্থায় সর্বশেষ চলচ্চিত্র “কানুন আপনা আপনা” মুক্তি পায়। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৯২ সালে নসীবওয়ালা ও ১৯৯৪ সালে ইনসানিয়াত মুক্তিপ্রাপ্ত হয়।
১৯৭৪ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত করে। নূতন রেকর্ডসংখ্যক পাঁচবার সেরা অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন যা ৩০ বছরের অধিককাল টিকে ছিল। পরবর্তীতে তাঁর বোনঝি কাজল ২০১১ সালে তাঁর সমকক্ষ হন।
সর্বোপরি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মহিলা অভিনেতা বিভাগে সর্বাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। ছয়টি পুরস্কার পেয়ে তাঁর সাথে রয়েছেন জয়া বচ্চন। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক তাঁর সম্মানার্থে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল।
এই লাস্যময়ী অভিনেত্রী ১৯৯১ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী প্রয়াত হন মাত্র ৫৬ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন।
তথ্য সূত্র ও ছবি- উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহকৃত।