মোস্তফা কামাল পাশা।
কিছু কিছু জাতকের হঠাৎ হঠাৎ আগমন ঘটে ধুলোর মাটিতে। এদের ভিতরে ঠাঁসা থাকে ক্রোধ,
দ্রোহের এক গাদা বারুদ। অথবা বলা যায়, এরা দেখতে মানুষ কিন্তু আসলে মিশাইলের খোলস! ভিতরে ভয়ঙ্কর বারুদ, ডগায় ওয়ারহেড বা মারণাস্ত্র। কচিৎ বা কদাচিত এরা জন্মান। এমন সময়ে আসেন, যখন দেশের বড় বেশি প্রয়োজন।
এরকম দহণকালে দেশ অসংখ্য বারুদে ঠাঁসা মিশাইল পেয়েছে। এরা জীবনকে ভোগ-উপভোগ করতে আসেনা, আসে শত্রুর বুকে ক্ষেপণাস্ত্রের মত ঝাঁপিয়ে পড়তে। তাই জীবন তাদের পিছু ডাকেনা, ভোগ-উপভোগের আকর্ষণ এদের কাছে স্রেফ জন্জালের ভাগাড়। জন্জালের ভাগাড়ে জন্মায় অগুনতি থিকথিকে পোকা। জীবন উপভোগের নামে পোকারা ভোগ, লোভ, লালসার জন্জাল খেয়ে বাঁচে। খেয়ে খেয়ে একসময় রক্তচোষা চিনেজোঁকের মত ফুলেফেঁপে টুপ করে খসে পরে। জন্জালে আটকে থাকা ঘিনঘিনে পোকার ঝাঁকও এদের খবর নেয়না। কে আসল বা ঠেঁসে গেল, চোখ মেলে তাকাবার সময় পেটুক পোকাদের নেই।
দেখবে কী করে-পোকারতো চোখও নেই! আছে কেবল পেট! এখন দেশজুড়ে ভাগাড়ের পোকারা কিলবিল করছে-হাত পা থাকলেও এদের মানুষ ভাবার কারণ নেই। এরা আসলেই জন্জাল ভাগাড়ের পেটুক পোকা। পোকারা সবসময় থাকে, কখনো বেশি কখনো কম। এখন এদের আবাদ ও বাম্পার ফলনের ক্রান্তিকাল পার করছে দেশ!
কিন্তু একসময়ে এমন ছিলনা। তখন ছিল দহণকাল। তখন জন্মেছিলেন জীবন্ত মিশাইল সাইফুদ্দিন খালেদের মত দ্রোহ, ক্রোধ, মনন, মেধার অপূর্ব সমন্বয়ের মানবিক খোলসের বিরল বারুদ। এরা দেশ ও মানুষের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহবানে হায়েনা, ডাকাত, দানবমুক্ত স্বাধীন দেশ উপহার দিতে ভেতরের পুরো বারুদ ঢেলে দেন। বিস্ফোরণে জ্বলে উঠা আগুনে হানাদার হায়েনারা দেশছেড়ে চিরতরে পালায়।
আমরা জানি, মানুষের সবচে’ প্রিয় সম্পদ তার জীবন। এর চে’ দামি কিছু হতেই পারেনা! পাপি বা পূণ্যবান কেউ শেষ নিঃশ্বাসের আগে জীবনের মায়া ছাড়তে পারেননা। অপ্রিয় সত্য, যে যতবেশি প্রভাবশালী, ভোগী, বিত্ত ছাড়া কিছু বুঝে না-জীবনের সোনার শিকল তার ততই শক্তিধর। এরা জেনেও ভুলে থাকে, শেষ অক্সিজেন শোষনের মাঝেই কালো পর্দা জীবনের! বিশাল বিত্ত, বৈভব, প্রভাব কিছুই সাথে নেবার সুযোগ নেই। ক’ ঘন্টা আগের প্রচন্ড দাপুটে লোকটার পরিচিতি তখন স্রেফ জড়বস্তু বা লাশ!
সব জেনে-বুঝে জীবনটা নষ্ট করি-এটা আরেক গোলকধাঁধা! লোভ,ভোগ,মোহ,খ্যাতি,
যশ, প্রতিষ্ঠা, বিত্ত বৈভব হাতাতে সব করি। ভোগের দানো যত শক্তিধর হয়, ততদ্রুত মানবিকতা, দেশপ্রেমের মত অমূল্য সম্পদ ঝরে যায়। সমাজে বাড়ে অস্থিরতা, অবিশ্বাস। মিথ্যার ঘোলাসাগরে ডুবে যায় সত্য-সুন্দর।
অথচ, আমরা এমন ছিলাম না। দেশপ্রেম, মানবপ্রেমের অমৃতে জীবন ভরপুর ছিল। জীবনে বার বার মৃত্যু ছোবল হেনেছে- তুলে নিয়েছে অনেক জীবন। তবুও মৃত্যুখেলা থামেনি। এই খেলার অনন্য সেনাপতি শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী। মাত্র ২২ বছরের ছোট্ট জীবনটি নিয়ে বারবার মৃত্যুর সাথে খেলেছেন। মৃত্যুকে চাকর-বাকর বানিয়ে দেশের জন্য জীবনের খোলসভর্তি বিস্ফোরক ছুঁড়ে দিতে তাঁকে একটুও ভাবতে হয়নি। তিনি চট্টগ্রামের অবিসম্বাদিত গণ মানুষের নেতা, শ্রমজীবী মানুষের সার্বক্ষণিক বন্ধু, বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথম মন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা নেতা জননেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীর জেষ্ঠপুত্র।
ছিপছিপে খাপখোলা তরোয়াল! হাল্কা পাতলা এই তরুন বয়ঃসন্ধি কাল থেকেই দেশপ্রেমের বারুদে ঠাঁসা। সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে পড়ার সময়ে ছাত্রলীগ রাজনীতি সংগঠিত করেন শহরের প্রতিটি স্কুল-কলেজে। স্কুল জীবনেই তিনি পাবলিক লাইব্রেরি, বৃটিশ কাউন্সিলসহ শহরের সব বড় লাইব্রেরির কার্ডধারী নিয়মিত সভ্য! দেশ ও বিশ্ব রাজনীতি আত্মস্থ করেন অতি দ্রুত। স্কুল ও পরবর্তীতে কলেজ জীবনেও বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং বক্তৃতায় তাঁর সাথে পাল্টা দিতেন বিশ্বস্ত বন্ধু মরহুম ইদরিস আলম। তাদের অন্য ঘনিষ্ট বন্ধুরা হচ্ছেন, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, মরহুম খালেকুজ্জামান, নঈমুদ্দিন চৌধুরী, মরহুম সুলতানুল কবির চৌধুরী, শফর আলী, ফিরোজ আহমদসহ আরো একঝাঁক তরুণ। সবাই ছাত্রলীগ রাজনীতির জাতক। তারা পরস্পরের খুবই ঘনিষ্ঠ।
সৌভাগ্য, সিটি কলেজে জুনিয়র কর্মি হিসাবে সত্তুর সালে সাইফুদ্দিন ভাইয়ের মত তুখোড় ও দুঃসাহসী নেতাকে পেয়েছি। গ্রাম থেকে বয়ে আনা জড়তা তখনো আছে। কিন্তু প্রতিফোটা হিমোগ্লোবিনে দ্রোহের বারুদ তুষের আগুনের মত জ্বলছিল। গণ আন্দোলন জোয়ারের ঢেউ শহর ছাত্রলীগ কেন্দ্র সিটি কলেজে তখন তুমুলভাবে আছড়ে পড়েছে। প্রতিদিনই মিছিল, মিটিংএ কলেজ থেকে সারা শহর দাবড়ে বেড়াচ্ছি। সিটি কলেজে তখন সুলতানুল কবির চৌধুরী, মরহুম হারুনুর রশিদ, ইদরিস আলম, মরহুম এস.এম কামাল উদ্দিন, মরহুম ম, ইদরিস, খালেকুজ্জামান, মরহুম কিবরিয়া, সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরীরা ছিলেন সামনের সারির নেতা।
ইদরিস আলমদের চে’ বয়সে কনিষ্ঠ হলেও কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত এজিএস সাইফুদ্দিন ছিলেন সম্মোহনী সুবক্তা এবং অদম্য সাহসী। বঙ্গবন্ধু মুক্তি, স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন, রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের সূচনাতেই বারবার প্রমাণ করেছেন, তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী, মৃত্যুন্জয়ী বীর। এখানে কিবরিয়াদের প্রসঙ্গও তুলতে হয়, দেশব্যাপী বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, তাঁর ৬ দফা, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নে দুর্বার গণ আন্দোলন থামাতে আইয়ুবের পোষা ভাঁড় গবর্নর মোনেম খান এনএসএফ নামে সরকারি পেটোয়া বাহিনী গড়ার পাশাপাশি ছাত্রলীগেও ভাঙ্গন তৈরি করে।
কুশীলব হিসাবে ১/১১’র সুবিধাভোগী ফেরদৌস কোরেশী ও মরহুম আল মুজাহিদীকে বেছে নেয়। তারা রাতারাতি বাংলা ছাত্রলীগ নামে নয়া গ্রুপ করে চট্টগ্রামের মাস্তান কিবরিয়াকে সিটি কলেজ দখলের দায়িত্ব দেয়। কিবরিয়া শহরের বিপুল মাস্তানসহ সিটি কলেজ দখল নিতে সশস্ত্র অবস্থায় নেকড়ের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে। আতঙ্কিত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা পালাতে থাকে। কিন্তু অবাক কান্ড! ছিপছিপে সাইফুদ্দিন কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা নিয়ে সামনে থেকে চ্যালেঞ্জ করেন। বলেন, ‘কিবরিয়া তোর দিন শেষ, আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিস, পুড়ে মরবি’!
সঙ্গে সঙ্গে সশস্ত্র কিবরিয়া দলবলসহ সাইফুদ্দিনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু এই খাপখোলা তরবারি একচুলও পিছু হটেননি। উল্টো প্রচন্ড থাপ্পড় চালান মাসলম্যান খ্যাত কিবরিয়ার গালে। হতচকিত কিবরিয়া থমকে দাঁড়ালে তার বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সমবেত প্রতিরোধের মুখে কিবরিয়া বাহিনী লেজ গুটিয়ে পালায়।
চট্টগ্রামের স্বাধীনতা আন্দোলনে এটা এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। কারন, সিটি কলেজই ছিল তখন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগের আন্দোলন-সংগ্রামের মূলকেন্দ্র। সিটি কলেজ কিবরিয়াদের দখলে গেলে চট্টগ্রামের ছাত্র আন্দোলনে পরবর্তী ধাপে কী ঘটতো, তা কল্পনা করতেও ভয় হয়। হামলায় সাইফুদ্দিন ভাইসহ আরো বেশ ক’জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মি আহত হন। তাঁকে ক’দিন চিকিৎসায় থাকতে হয়।
হামলার খবর রেষ্ট হাউসে অবস্থানরত শহর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পিতা জহুর আহমেদ চৌধুরীকে জানানো হলে তিনি প্রিয় ছেলের বদলে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অবস্থান জানতে চান। কলেজে সার্বক্ষণিক নজরদারিরও নির্দেশনা দেন। প্রিয় পুত্র নয়, তাঁর কাছে সংগঠন ও দেশ যে বেশি দামি, কর্ম দিয়েই বারবার প্রমান রেখে গেছেন।
সাইফুদ্দিন ভাইকে নিয়ে ২০১২ সালের ১৩ এপ্রিল তাঁর শাহাদাত বার্ষিকীতে সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী “মৃত্যুন্জয়ী বীর শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী” নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করেছেন। সম্পাদনা নাকি তাড়াহুড়োজনিত কারনে ঠিক জানিনা, এতে স্মৃতিচারণকারীরা তাঁর মার্চ-এপ্রিলের টানা প্রতিরোধ যুদ্ধ,অবস্থান ও শাহাদাত নিয়ে কিছুটা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। শাহাদাতের স্পট ঠিক থাকলেও গ্রুপটির ওখানে যাওয়ার রুট নিয়ে মতভিন্নতা প্রচুর।
১৯৭১ এর ১৩ এপ্রিল ইন্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে সাইফুদ্দিন ভাইদের জিপ হানাদার পাকি দস্যুদের সহজ টার্গেটে পড়ে। কিছুক্ষণ খণ্ডযুদ্ধের পর জিপ আরোহী দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা সাইফুদ্দিন খালেদ, চাকসু জিএস আবদুর রব, অধ্যাপক দীলিপ চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মোজাফফর আহমদ, জিপচালক মোহাম্মদ ইউনূস শহীদ হন।
সুলতানুল কবির চৌধুরী জিপের আড়াল নিয়ে পাহাড় ঝোপে আত্মগোপন করে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। হানাদারের হাতে ধরা পড়েও উর্দু পশতু ভাষা ব্যবহার করে ফিরোজ আহমদও বেঁচে যান। সাইফুদ্দিন ভাইসহ দুজন সম্মুখযুদ্ধে বাকিরা আটক অবস্থায় গণখুনের শিকার হন।
বিভ্রান্তি থাকায় শাহাদাতের আগের কিছু ঘটনা এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। কারণ এতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নের সামনের সারির শহীদ পাঁচ নেতার স্মৃতির প্রতি অমর্যাদা হবে। এমনিতেই সাইফুদ্দিন ভাই ছাড়া চার শহীদের কথা বড়বেশি উচ্চারিত হচ্ছেনা। ৩০ লাখ নাম না জানা শহীদের মত তাঁরা স্রেফ সংখ্যার সমুদ্রে মিশে যাচ্ছেন।
যা’হোক শহীদ অধ্যাপক দীলিপ চৌধুরীকে নিয়ে আজাদীতে এবার গতবছর ১৩ এপ্রিল স্মৃতিচারণ করেছেন, প্রিয়জন দীপেন চৌধুরী। কিন্তু তাঁকেও শোনা কথা নিয়ে এগুতে হয়েছে। উপায়ও ছিলনা, প্রামাণ্য দলিল না থাকলে যা হয় আর কী! তিনি মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস, ফিরোজ আহমদসহ আরো ক’ জনের বক্তব্যের উধৃতি টেনেছেন। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রাপ্ত তথ্য, নাসিরুদ্দিন চৌধুরী সম্পাদিত ২০১২ সালের স্মরণিকায় স্মৃতিচারণকারী ২০ জনের কারো লেখায় মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিসের নাম এই যুদ্ধে আসেনি।
এমনকি প্রামাণ্য তথ্য ভান্ডার হিসাবে ইদরিস আলমের লেখায়ও নয়। তাই মুক্তিযুদ্ধের অত্যন্ত দরকারী তথ্যবিকৃতিতে যাচ্ছি না। ইতোমধ্যে যে সব মুক্তিযোদ্ধা বই বের করেছেন,স্মৃতিচারণ করেছেন, সেখানে নিজের আমিত্বের বাড়াবাড়ি মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব খাটো করে দিচ্ছে। সৌখিন গবেষকরাও নির্মোহ অবস্থান থেকে দূরে।
স্বাভাবিক কারনে ইতিহাস বিকৃতি সামনের দিনে আরো বাড়তেই থাকবে। শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী কিছুটা হলেও মর্যাদা পাচ্ছেন, বিকৃতি থেকেও মুক্ত আছেন। এটা তাঁর ছোটভাই মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাবউদ্দিনসহ অন্য ভাইদের আগ্রহের কারনে। তাঁর অযত্নে পড়ে থাকা অরক্ষিত কবর থেকে দেহাবশেষ বাবা জহুর আহমেদ চৌধুরীর কবরের পাশে সমাহিত করা হয় ২০১২ সালে। তাও মাহতাব ভাই, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফানসহ অন্য ভাইদের আগ্রহে। নাহলে শহীদ আবদুর রব, শেখ মোজাফফর, দীলিপ চৌধুরী, ইউনূসদের মত অযত্নে- অবহেলায় স্মৃতি থেকেও মুছে যেতেন।
এটা জাতি হিসাবে আমাদের সবচে’ বড় লজ্জা। মুক্তিযোদ্ধা কোটা,ভাতা, উপহার, সুবিধা নাতিপুতিসহ বাড়িয়ে নিতে আমরা যতটুকু তৎপর, বিপরীতে যাদের রক্তে গোছল করে এবং সম্ভ্রমের দামে এই মাটি মুক্ত ও পবিত্র হয়েছে, তাদের অবহেলা করতেও সমানে আগুয়ান! অন্তত চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ শহীদ সাইফুদ্দিনের সহযোদ্ধা সব শহীদের জীবন, যুদ্ধ, তাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের সঠিক ইতিহাস আগামী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে পারতো।
এটা হলে তারুণ্য দেশপ্রেমের হিরের খনি থেকে আলো নিতে পারতো। বিকৃত হতোনা ইতিহাস। যাকগে, সাইফুদ্দিন ভাইয়ের মায়ের কিছু উধৃতি টেনে লেখা শেষ করছি। সাইফুদ্দিন ভাইয়ের মা জাহানারা বেগম গত বছর পরলোক পাড়ি দিয়েছেন। জেষ্ঠ পুত্রের শাহাদাতের খবর তাঁর কাছে অনেকদিন গোপন রাখা হয়। এমনকী মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড প্রধান বাবা জহুর আহমদ চৌধুরী ফিরে আসার পরও। মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীসহ অন্য ভাইরা তাঁকে আশ্বস্ত করছিলেন, ‘তোমার ছেলে খুব ভাল আছে। বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে’। কিন্তু ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ফিরে আসলে তাঁকে আর কোনভাবেই সামলানো যাচ্ছিলনা।
সাদাসিধে শহীদ জননী প্রিয় জেষ্ঠ সন্তানের শোকে প্রচন্ড আহাজারি করতে থাকেন। তখন মাহতাব ভাই মাকে বুকে জড়িয়ে বলেন,–“কাঁদ কেন মা! তুমি শেখ মুজিবের মা, তুমি ক্ষুদিরামের মা, তুমি সূর্যসেনের মা, তুমি পুরো বাংলাদেশের মা, তুমি ত্রিশ লাখ শহীদের মা”!
১৩ এপ্রিল (আজ) শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদসহ জাতির পাঁচ সেরা যোদ্ধার শাহাদাত বার্ষিকী। জীবনের খোলসে পুরে রাখা মিশাইলের বিস্ফোরণ ঘটানো শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরীসহ সব শহীদের মহাণ স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক-ঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী’র
৪৯তম মৃত্যু বার্ষীকি আজ
চট্টবাংলা পরিবারের পক্ষ থেকে জানাই
বিনম্র শ্রদ্ধা।