সোমবার , এপ্রিল ৭ ২০২৫
শিরোনাম
Home / শিক্ষা-সাহিত্য / অনুগল্প-ঃ ৷৷৷ মেঘ ~~~~~~~~~~~ সবুজ অরণ্য।

অনুগল্প-ঃ ৷৷৷ মেঘ ~~~~~~~~~~~ সবুজ অরণ্য।

ভুলে যাবে তুমি? পারবে, আমাকে ভুলে যেতে। মুছে দিতে তোমার জীবন থেকে। যাও । কত দূর যাবে তুমি, আমাকে ছেড়ে। এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলেই দিবাকর’র চোখে চোখ রাখে সপ্তপর্ণা।
দিনের ব্যস্ততা শেষে সদ্য পা রেখছে বিদায়ী শরতের সন্ধ্যা রাত্রি আঙ্গিনায়। নিয়ন আলো দখল নিয়েছে সন্ধ্যার নীরবতার। অফিস ফেরত মানুষের পদভারে ধূলায়িত পথ। অগনীত পায়ের শব্দ জমাট বেধেঁছে ইট পাথরের বুকে।
নাগের বাজারের এই মোড়টা কেমন যেন অন্য রকম ঠেঁকছে আজ, সপ্তপর্ণার কাছে।কত চেনা জানা এই শহর। তবু কেমন এক নবতর প্রেমের কাব্য যেন। আলুপুরির শেষ অংশটুকু মুখে দিয়ে আবারও চোখ রাখে দিবাকর’র চোখে।
গুনে গুনে আজ সপ্তম বারে পা রাখল দূ’জন দূ’জনকে দেখার। যতবারই দেখা হয়েছে সপ্তপর্ণা-ই আগে কথা বলতে শুরু করেছে,আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবু কখনো সপ্তপর্ণার চোখে চোখ রাখার সাহস হয়নি দিবাকর’র, কিন্তু আজ চার চোখের মিলণে কেমন অদ্ভুদ শিহরণ অনুভব করল দিবাকর। বিদ্যুৎ খেলে গেল সারা দেহমনে।
সপ্তপর্ণা বি.এড শেষ বর্ষের ছাত্রী। দূ’জনার আগে কোন পরিচয় ছিলোনা বললেই চলে।
তখনো তারা দু’জন দু’মেরুর বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই দারুন চঞ্চল আর প্রচন্ড আবেগি ডানপিটে মেয়েটিকে নিয়ে অভিযোগের শেষ যেন শেষ নেই মার। সারাদিন হৈ-হুল্লোড় আর দস্যিপণায় মাতিয়ে রাখে সারাবাড়ি।
একদিন কোন এক বিদায়ী হেমন্তের দক্ষিণা বাউলা বাতাস যখন প্রতিযোগিতায় নামে সপ্তপর্ণার মনকে অস্তির করে তুলতে,ঠিক তখনি কলিং বেলের শব্দ ঝংকার তুলে ভাবনার অন্দরে। দৌঁড়ে দরজা খুলে মেজ মামাকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয় সপ্তপর্ণা। কিন্তু সে খুশি বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি তার। বসার ঘরে মা আর মামার কথা শুনে তার আর বুঝতে বাকি নেই সবাই যুক্তি করে যেন উঠে পড়ে লেগেছে তাকে পাত্রস্ত করে এবাড়ি থেকে বিদায় দিতে।
বিদায়ী হেমন্ত আর আগমনী শীতের মধ্যস্থতায় শীতের হালকা দাপট প্রকৃতিজুড়ে। জানলার ফাঁক গলে সকালের সোনালু রোদ আসন পেতেছে সপ্তপর্ণার ফুল সাদা বিছানায়। রবিবার। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। তাই কলেজ যাওয়ার ব্যস্ততাও নেই। গড়ির এলার্নটা বন্ধ করে মায়ের গন্ধমাখা কাঁথাটা গায়ে চড়িয়ে ওপাস করে শোয় আলসে ভঙ্গিমায়। তখনই শুরু হয় মায়ের ডাকাডাকি… সপ্ত। সপ্ত। ও সপ্ত। উঠ মা। অনেক বেলা হলযে, বিকেলে ওবাড়ি থেকে অতিথিদের আসার কথা। অনেক কাজ পড়ে আছে চারপাশটা ঘিরে।
বিষর্ণতায় ভরে গেল সপ্তপর্ণার মন। তার আর বুঝতে বাকি নেই ; ওবাড়ি থেকে অতিথি আসার মানে ! নিজেকে সাঁজিয়ে গুছিয়ে পুতুলের মত করে দাঁড় করাতে হবে তাঁদের সামনে। বড় পক্ষ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখবে। চুল বাঁধতে পারি কিনা। ভাত রান্না আর বাটনা বাটার খবরও জানতে চাইবে হয়ত কেউ কেউ। চাকরী প্রত্যাশী প্রার্থীর মতোন সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলেই মিলবে সারাজীবনের নিশ্চয়তা। ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই দু’চোখের কোল জুড়ে জমেছে জল। নিজেকে নিজের কাছে খুব অসহায় লাগছে সপ্তপর্ণার।
লেখক-ঃ সাংবাদিক,কবি ও গল্পকার।
সম্পাদক- বিন্দু (শিল্প সাহিত্যের ছোট কাগজ)
                                                                                                                

এটি পড়ে দেখতে পারেন

ভালো মানুষের সংখ্যা বাড়ানোর আন্দোলন চাই

ড. মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী ———————————— সমগ্র পৃথিবী দ্রুত উন্নতি হচ্ছে, হবে, হতেই থাকবে কিন্তু মানুষের …