আজ পহেলা আষাঢ়। আবহমান বাংলার চিরায়ত আষাঢ়। বর্ষার প্রথম দিন আজ। যদিও বর্ষার জানান পেয়েছি অনেক আগেই। বৃষ্টির ফোঁটায় শীতল হয়েছি। বৃষ্টিতে ভিজেছি। কৃষকের সাথে এই আষাঢ়ের নিবিড় সম্পর্ক। বলা যায় আত্মার আত্মীয়।
জমিতে বৃষ্টির জল গড়ালেই কৃষক হাল নিয়ে মাঠে যায়। বৃষ্টির জলে মাটি যখন নরম হয় তখন হাল চাষে সুবিধা হয় কৃষকের। ধান রোপার বীজতলা তৈরী হয়। এভাবেই আষাঢ়ের সাথে কৃষির হৃদ্যতার সম্পর্ক।
কবিতায়, গানে, গল্পে, প্রবন্ধে আষাঢ় প্রেমের মত উঠে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ আষাঢ়কে গানে এনেছেন বহুরুপে। বহুভাবে এসেছে তাঁর কবিতায়। তিনি একটি গানে লিখেছেন এভাবে- আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে…। পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে/ পাগল আমার মন বেজে উঠে। রবি ঠাকুরের এই গানটি আমাদের বাঙালির মুখে মুখে। আবার কবিতায় তিনি বর্ষাকে ডেকেছেন ভিন্নভাবে- ওরে আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে। আষাঢ় বা বর্ষাকে তিনি কতরুপে,কতভাবে নিয়েছেন হৃদয়ে, তা অল্পবিদ্যায় বর্ননাতীত। এভাবে আষাঢ় আমাদের সংস্কৃতিতে গলাগলি করে হেটেছে। বৃষ্টি হলে বাঙালির হৃদয়ে আলাদা শিহরন জাগে। হৃদয়ে ভাবের উদয় হয়। রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও আষাঢ়কে অন্যান্য গীতিকারেরাও হৃদয় দিয়ে এঁকেছেন। যেমন- আষাঢ় শ্রাবন মানে নাতো মন/ ঝরো ঝরো ঝরো ঝরো ঝরেছে। এ গান শুণে কোন বাঙালির মন খারাপ থাকে। ভাবে উদ্বেল হয়ে যায়। আকাশে কালো মেঘে ছেয়ে যায়। গুরুম গুরুম আওয়াজে সাথে বিদ্যুতের চমক মনকে পাগল করে দেয়।
পৃথিবীর আজ দুর্দিন। মরনব্যাধী করোনা ভাইরাস মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। যে দিকে তাকাই মৃত্যু, মৃত্যু আর মৃত্যু। মানুষ ঘরে বন্দি।কতদিন বন্দি থাকবে ঘরে। পেট নামক বস্তুটার জন্যতো ঘরে থাকা যাচ্ছেনা। মৃত্যু কখন দুয়ারে চলে আসে তার কোন সময় নেই। চিকিৎসা নেই।কোথায় নিবে মানুষ। চারিদিকে হাহাকার। আষাঢ় তুমি যদি পারো বিনাশ করে দাও এই হিংস্র দানবকে। থাবা দিয়ে উড়িয়ে দাও এই জগত থেকে। আমরা আজ বড়ই অসহায়।
লেখক-ঃ নাট্য ও সস্কৃতিকর্মী।