
========== এইচ এম শাহীন ===========
আমরা অনেক সময় শুধুমাত্র সন্দেহ এবং ভয়ের কারণে মরার আগেই কয়েকবার মারা যাই। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে যত রুগী মৃত্যুবরণ করেছেন, তার মধ্যে অধিকাংশই হয়েছে পেনিক ডিসঅর্ডার এর কারণে। অর্থাৎ যখনই রুগী বুঝতে পারে যে, সে করোনায় আক্রান্ত, তখন সে এটা ভাবতে থাকে যে, এখন আমার কি হবে! আমার বুঝি আর নিস্তার নাই! যেখানে করোনার কোনো ওষুধই তৈরি হয় নাই, সেখানে আমার মরণ ছাড়া তো কোন উপায়ই নাই! মূলত এ চিন্তা থেকেই রুগী অনেক সময় প্যানিক অ্যাটাক বা হার্ট অ্যাটাকও করতে পারে।
আবার অনেক সময় দেখা যায়, একজন সুস্থ মানুষও বিভিন্ন সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নিজেকে করোনা রোগীর সাথে তুলনামূলকভাবে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে। এটিও কারোনায় আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে কম ভয়ঙ্কর নয়।
এবার আসি মূল কথায়,
কারোনা বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি মহামারী। আর কোনো মহামারী থেকে পলায়ন করা খুব একটি সহজ কাজ নয়। আমরা বেঁচে থাকার উপায় অবলম্বন করতে পারি মাত্র। কিন্তু শত চেষ্টার পরেও কোনো না কোনভাবে আমরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৮০% এরও বেশি। অর্থাৎ আমরা প্রত্যেকেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ৮০% ঝুঁকিতে রয়েছি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, করোনা কতটা আগ্রাসীভাবে আমাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
তাহলে বাঁচার উপায় কি?
প্রথমত প্রতিরোধ। দ্বিতীয়ত প্রতিকার।।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। মুখে মাস্ক পরিধান করতে হবে। ঘনঘন সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে হবে। নাক, মুখ, চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এসবের মাধ্যমে আমরা করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। তবে এ ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও যে আপনি করোনা থেকে বেঁচে যাবেন, তার কোন গ্যারান্টি নেই। সুতরাং কোন কারণে যদি আপনি আক্রান্ত হয়ে যান, তাহলে আপনাকে প্রতিকার ব্যবস্থা নিতে হবে।
এখন আপনি বলতে পারেন, যেখানে করোনার ঔষধই এখনো আবিষ্কার হয়নি, সেখানে আবার প্রতিকার ব্যবস্থা কি? আমি বলব হ্যাঁ, অবশ্যই এর ঔষধ বা প্রতিকার ব্যবস্থা রয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক রোগেরই ঔষধ রয়েছে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা রোগ যখন দেন, সাথে তার প্রতিকারের ব্যবস্থাও দিয়ে দেন। কিন্তু এ ঔষধ অনেক সময় সহজলভ্য হয়। আবার অনেক সময় সহজলভ্য হয়না। তবে তা আবিষ্কার করতে হয়তো আমাদের সময় লেগে যায়।
আপনি খেয়াল করলে দেখে থাকবেন যে, এখন পর্যন্ত যেসব করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, তাদের জন্য যে চিকিৎসা ব্যবস্থা দেওয়া হচ্ছে, তা কিন্তু শতভাগ কার্যকরী কোন চিকিৎসা নয়। রোগী হসপিটালে ভর্তি থাকুক কিংবা বাসা বাড়িতে, অধিকাংশ সময়ই তাদেরকে প্যারাসিটামল, এন্টিবায়োটিক বা সাধারণ কিছু ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এটি কোন বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা হতে পারে না।
তবে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যেসব দুরারোগ্য ব্যাধি আবিষ্কৃত হয়েছে, তার চিকিৎসা সেবাও দুষ্প্রাপ্য। যেমন ধরুন -ক্যান্সার। অন্যদিকে যেসব রোগ সাধারণ মানুষের মাঝে অহরহ হয়ে থাকে, তার চিকিৎসাও সহজলভ্য। যেমন- জ্বর, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি।
আর পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যত মহামারী হয়েছে, তা যেহেতু সাধারণ মানুষের মাঝে অহরহভাবে হয়েছে, তাই স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী মহামারীর চিকিৎসাও সহজলভ্য। অন্যথায় একেকটি মহামারীতে মানবসভ্যতা বিলীন হয়ে যেতো। হয়তো আমরা এর সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে সময় ক্ষেপন করে ফেলি।
একটি উদাহরণ হিসেবে বলি, যখন কলেরা মহামারী ছড়িয়ে পড়ে, তখন লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে সঠিক চিকিৎসার অভাবে। কিন্তু মানুষ যখন জানতে পারল শুধুমাত্র স্যালাইন খেয়ে এই কলেরা ভালো হয়, তখন কিন্তু মানুষ কলেরার সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছে। আর স্যালাইন বানানোর উপকরণটি প্রতিটি ঘরে ঘরেই ছিলো।
ঠিক একইভাবে বর্তমান করোনা মহামারীতে যেসব মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পরও হসপিটাল কিংবা ডাক্তারের শরণাপন্ন না হয়ে শুধুমাত্র ঘরোয়া টোটকা চিকিৎসা নিয়ে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়েছেন, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে তাদের যে অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন, সবার কথারই সারমর্ম প্রায় একই। তারা আক্রান্ত হয়েও কিভাবে শুধুমাত্র ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়েছেন, তার পদ্ধতি গুলো মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হওয়ার পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
প্রথমেই বলে রাখি, ভাইরাস এর গায়ে অত্যন্ত নরম প্রকৃতির একটি প্রোটিন প্রলেপ থাকে, যা যে কোন ক্ষারীয় পদার্থ দ্বারা খুব সহজেই ধ্বংস হয়। যেমন সাবান, সেনিটাইজার ইত্যাদি। তাছাড়া এটি পরিমিত গরম কিংবা উষ্ণতায়ও বিগলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। তাছাড়া শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে আপনি ভাইরাস এর সাথে অধিক সময় লড়াই করে টিকে থাকতে পারবেন। সুতরাং, আপনি যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন কিংবা আক্রান্ত বলে সন্দেহ পোষণ করে থাকেন, তবে-
১। প্রতি ঘন্টায় বা নিয়মিত কুসুমের চেয়ে একটু গরম পানি পান করুন। এতে ভাইরাস উষ্ণতায় বিগলিত হতে পারে।
২। গরম পানিতে লেবু ব্যবহার করুন। কারণ লেবুতে ক্ষারীয় পদার্থ রয়েছে। তাছাড়া লেবুর ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৩। পানিতে কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ কালোজিরায় মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের প্রতিষেধক রয়েছে।
৪। তাছাড়া গরম পানিতে পরিমাণ মতো আদা, লবঙ্গ, গোল মরিচ, এলাচি, রসুন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এগুলোতে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক রয়েছে।
৫। রং চা এর সাথে কালোজিরার তেল এবং মধু মিশ্রণ করে নিয়মিত পান করতে পারেন। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
৬। নিজের সাধ্যমতো প্রতি ঘন্টায় কিংবা দিনে অন্তত ৪ বার ফুটন্ত গরম পানির উষ্ণ বাষ্পীয়তে ১০ মিনিট করে নাকে শ্বাস নিয়ে মুখে ছাড়ুন। এতে ভাইরাস দ্রুত বিগলিত হয়ে ধ্বংস হবে।
৭। নিজ নিজ পাপের জন্য বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা/তওবা করুন। কারণ আমাদের পাপের কারণেই অনেক সময় পৃথিবীতে আজাব গজব নেমে আসে।
৮। এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে সর্বাবস্থায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকুন।
উপরোক্ত বিষয়গুলো পালন করলে আশা করি, আপনি করোনা ভাইরাস থেকে ১০০% মুক্তি পাবেন, ইনশাআল্লাহ। তবে উপরের সবগুলোই যে আপনার হাতের নাগালে বা সাধ্যের মধ্যে আছে এমনও নয়। তাই সবকিছু নিজের সাধ্যানুযায়ী করার চেষ্টা করুন। তবে মনে রাখবেন, ভাইরাস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়া আর মৃত্যু থেকে বেঁচে যাওয়া এক জিনিস নয়। কারণ মানুষের মৃত্যু অবধারিত। যার মৃত্যু যখন যেভাবে লিখা আছে, সেভাবেই হবে।
আমার মনে হয়, করোনা ভাইরাস নিয়ে খুব বেশি আতঙ্কিত না হয়ে, কিভাবে এ ভাইরাস থেকে নিরাময় হওয়া যায়, তার নিয়ম আয়ত্ত করা এই মুহুর্তে খুবই জরুরী। চীনের উহান শহরের মানুষেরা ইতোমধ্যে করোনার সাথে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তারা এখন আর আতংকিত নয়। আমরাও এভাবে করোনা ভীতি নিয়ে খুব বেশিদিন টিকে থাকতে পারবো না।
জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে আমাদেরকে ঘরের বাইরে বেরোতেই হবে। আর যদি এভাবে নিজেদেরকে টানা লকডাউনে আবদ্ধ করে রাখি, তাহলে একটা সময় করোনায় নয় বরং লক্ষ লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষেই মারা যাবে।
আর আমার বিশ্বাস, মানুষ কখনো এটা হতে দেবে না। কারণ মানুষ বুঝবে যে, ঘরের ভেতরে লকডাউনে থাকলে মানুষ করোনার আঘাত থেকে বাঁচতে পারবে কিনা তা অনিশ্চিত। কিন্তু ঘরের ভেতরে দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকলে না খেয়ে যে মরতে হবে তা কিন্তু নিশ্চিত।
সুতরাং মানুষ স্বাভাবিকভাবেই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য বাধ্য হয়ে ঘর থেকে জীবিকার তাগিদে বেড়িয়ে পড়বে। আর তখন করোনা পরিস্থিতি থেকে আমাদেরকে কে বাঁচাবে? সুতরাং এখনই সময় করোনার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে বসবাস করার পদ্ধতি আয়ত্ত করে নেয়ার। ভয় নয়, করোনাকে জয় করুন।
