
চট্টবাংলা ডেস্ক-ঃ
দেশবাসির মনে থাকারই কথা এইতো সেদিন ৪ অক্টোবর ২০১৮ দেশব্যাপী ৪র্থ উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নড়াইলে জেলার লোহাগড়া উপজেলার সাথে ভিডিও কনফারেন্স করেন। সেখানে তিনি মাশরাফিকে নড়াইলের বড় সম্পদ উল্লেখ করে তার সুস্থ্যতার জন্য দোয়া চেয়েছিলেন। আর যাই কোথায় রাজনৈতিক মহলে শুরু হয় গুন্জন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ থেকে প্রার্থী হচ্ছেন কি জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রধানমন্ত্রী দোয়া চেয়ে রাখা বক্তব্যের পর নড়াইলের সর্বত্র গুঞ্জন আরো বেগবান হয়।
তখন নানামনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছিল মাশরাফি কি নড়াইলের এমপি প্রার্থী হচ্ছেন? প্রধানমন্ত্রী তার জন্য দোয়া চাইলেন কেন? এমন প্রশ্ন নিয়ে নড়াইলের হাটে মাঠে চলছিল নানান জল্পনা-
কল্পনা। নড়াইল-০২ আসনে মাশরাফি কী সত্যিই প্রার্থী হচ্ছেন এটি নিয়ে ভাবা শুরু করেছিল স্বয়ং জেলা আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরাও।
তখন রাজনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকা প্রার্থীরা মাশরাফিকে প্রতিদ্বন্ধী মনে করে বিভিন্ন তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্যও দিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু করেছিল অপপ্রচার মাশরাফির বিরুদ্ধে। মাশরাফির নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সামাজিক কর্মকান্ডকেও তারা নির্বাচনে নামার প্রক্রিয়া মনে করে তাতে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করেন নির্বাচন পূর্ববর্তী বিভিন্ন সময়।
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা সাগর সেচে মুক্তই যেন আহরোণ করলেন। নড়াইল-২ আসনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর শুরু হল মাশরাফির নতুন পথচলা। সে থেকে শুরু, সাদামাটা হাসিখুশি একজন প্রাণবন্ত উচ্ছসিত যুবক যার গতিতে পাল্টে যেতে থাকে নড়াইলের জনপদ।
দেশজুরে যখন শুরু হল মহামারি করোনার সংক্রমণ সেদিন থেকে নড়াইল-২ আসনের গলি থেকে রাজপথ ছুটে চলছে মাশরাফি বিন মর্তুজা।
কখনো ধূলোমাখা মেঠো পথ। কখনো সবুজের সীমারেখায় ঢেউ খেলে যাওয়া ধান ক্ষেতের আল্ ধরে ছুটে চলেছে ক্রিকেটের যুবরাজ। এলাকার মানুষের মধ্যমনি এমানুষটি প্রয়োজন অনুযায়ী সহযোগিতা পৌঁছে দিচ্ছেন জনগণের দৌঁড়গোড়ায়। নেই কোন ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইট। লাইনে দাঁড়ানোর ভীরভাট্টাও।
কখনো বাইকে করে ছুটে চলেছেন নড়াইলের কোন একটা গ্রামের দিকে। শহর থেকে বের হয়ে একটা গ্রাম মুলিয়া গিয়ে হঠাৎ একজন কৃষক যিনি জমি থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। গাড়ি থামিয়ে করলেন সালাম আর কূশল বিনিময়, “বাসায় সবাই ভালো? চাচা বাসায় খাবার দাবার আছে?
এই নেন এই প্যাকেটটা”। বৃদ্ধ কৃষক এতক্ষণে নীরবে এম.পি’র চলে যাওয়ার পথে ফ্যালফ্যেলিয়ে তাকিয়ে রইলেন।
আসি চাচা দোয়া করবেন। সাবধানে থাকবেন।
বাইক আবার চলতে শুরু করল। চলছেন একজন মাননীয় সংসদ সদস্য। আশেপাশে কোন পুলিশ নাই, কোন হুইসেল নাই, নাই কোন নেতাদের বহর।
৫ কোটি টাকার দামি প্যারোডি গাড়ি নাই যে গ্লাস নামিয়ে ঐ চাচা এদিকে আসেন অথবা সাথে থাকা বাহিনীর সদস্যদের কেউ গিয়ে ঐ কাকা আপনাকে এমপি মহোদয় ডাকেন!
বাড়ীতে গিয়ে হয়তো বৃদ্ধ মানুষটি স্ত্রী সন্তানদের ডেকে বুক ভরা আনন্দে উৎসাহ নিয়ে তাদের একজন জনপ্রনিধির বাস্তবতার গল্প শোনাচ্ছে। জানিস আজ কার লগে দেখা হয়েছিল? এই খাবার এই যে টাকা কে দিয়েছেন? পরিবারের সদস্যদের সবার মাঝে কি দারুণ উৎকন্ঠা।
মেয়েটিকে বুকে জড়িয়ে বাবা বলছেন আমাগো মাশরাফী দিয়েছে মা, সে হঠাৎ মোটরসাইকেল থামিয়ে আমাকে সালাম করে এই খাবার ও কিছু টাকা দিয়ে গেছেন।
এরকম হঠাৎ হঠাৎ নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়ীর সামনে নেমে কোথাও খাবার কোথাও টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন নড়াইলের মানুষের ভালোবাসার মাশরাফী।
কিন্তু কোন সাংবাদিকের ছবি তোলা থেকে নিজেকে বিরতি রেখেছেন। বিরত রেখেছেন সমবেত জনতার সঙ্ঘবদ্ধতা থেকেও।
হঠাৎ করে একজন গরীব মা যখন দেখলেন তাঁদের এম.পি মাশরাফী নিজে খাবারের প্যাকেট নিয়ে তার বাড়ী। তখন তাঁদের অনুভতি কেমন হয় এটা কেবল তারাই বলতে পারবে।
পাড়ার ছেলেরা বুঝে উঠার আগে,তরুণ প্রজন্মের সন্তানেরা বুঝে উঠার আগেই মাশরাফী এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে গিয়ে খাবার দিয়ে দ্রুত সরে পড়েছেন। যাতে কোন ভীড় না হয়। ঠিক যেন স্পাইডার ম্যান।
অথবা কখনো নড়াইল থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে কালনা ঘাট পর্যন্ত সামনে যত কৃষক, ভ্যান চালক পেয়েছেন হঠাৎ করে গাড়ি থামিয়ে সালাম দিয়ে কিছু সম্মানি হাতে দিয়েছেন দোয়া চেয়েছেন।
এমন সব মানুষের চোখের ভাষা তাদের আকুতি দেখে মাশরাফী যেন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছেন, “জীবনে যাই করি না কেন যাই হোক না কেন এদের সাথে বেইমানি করতে পারবো না। এদের ঠকাতে পারবো না”।
স্থানীয়রা জানান, দেশের যুবসমাজের আইকন মাশরাফি নড়াইলে আসলে দলমত নির্বিশেষে সবার সাথেই চলাফেরা করেন, তার কাছে দলের চেয়ে ব্যক্তি সম্পর্ক অনেক বড়। বন্ধু বৎসল মাশরাফি কখনোই কোন দলের হয়ে কথা বলেননি। নিজের খেলা আর এলাকার গরীব মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি। তার পয়সায় দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা এবং প্রকৌশলীতে পড়ালেখা করছেন এলাকার মেধাবী ছাত্ররা। এলাকার মানুষের কাছে মাশরাফি দিনে দিনে এমনই একজন দেবতুল্য মানুষ হয়ে উঠছেন।
মাশরাফির প্রতিবেশী ও বন্ধু সূত্রে জানা গেছে, তার (মাশরাফি) কাছ থেকে ভালোবাসা কিংবা সহায়তা পাননি নড়াইলে এমন মানুষের সংখ্যা বিরল। তাইতো তিনি আর্তমানবতা ও ক্রীড়ার সেবায় গড়ে তুলেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন। স্পন্সর জোগাড় করে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবলের জন্য ৩ বছরের কোর্স করাচ্ছেন, স্পেশাল জিম তৈরির উদ্যোগও নিয়েছেন। দরিদ্র মানুষের জন্য অ্যাম্বুলেস, স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করেছেন, নিজের বিজ্ঞাপনের টাকা দিয়ে চলছে নড়াইল বাসীর সেবা। দলীয় বা সরকারি কোনো সহায়তা ছাড়াই তিনি একান্ত প্রচেষ্টায় করেন এসব সেবামূলক কার্যক্রম।
স্থানীয় মানুষের আস্থার নাম মাশরাফি। তা্দের সুখ আর সুখানুভূতির নাম মাশরাফি। সবার মুখে একটা আনন্দের অনুভূতি এম.পি কি এমন হয়? এমপিরা এত সাধারণ থাকে? এই প্রশ্নই যেন ঘুরপাক খাই নড়াইলবাসি মনে। এমপি মাশরাফী নয়, মাশরাফি; আমাদের নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’র মাশরাফী বিন মর্তুজা হয়েই বেঁচে থাকুন।
