রাজীব রাহুল ।
কবি ও গল্পকার শুকলাল দাশ। যিনি দুহাতে লিখে চলেছেন শিশুসাহিত্য, কবিতা, গল্প ও পত্রোপন্যাস সহ নানা বিষয়ে । ইতিমধ্যে তার সাতটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে । পেশায় সাংবাদিক হলেও ‘ শিশুদের পাঠশালা’র পরিচালক হিশেবে সংগঠকের সুনাম কুড়িয়েছে এই বদ্বীপের বাণিজ্য নগরে। তার লেখা কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘ জলের দেশের রাজকন্যা ‘ পাঠকের নজর কেড়েছিলো । এবার একুশের বইমেলায় চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন থেকে বের হয়েছে তার কিশোর কবিতার বই ‘ মুজিব তুমি ব্রজকণ্ঠ অটল হিমালয়’।
বঙ্গবন্ধু, আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই বাংলার ইতিহাসে কতো রাজা ও নবাব এলো গেলো কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতা ছিলো না কখনোই। হয়তো রাজা বা নবাবরা স্বাধীন ছিলো বাঙালিরা স্বাধীন ছিলো না । সেই বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমান যিনি জীবনের বেশির ভাগ সময় কারাগারে বন্ধী ছিলেন শুধু বাঙালির অধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রাম করতে গিয়ে ।
তাঁর ডাকে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো। কবি শুকলাল দাশের কবিতায় সেই কষ্টের কথা ওঠে আসে – ‘ দুঃখ পেয়েও দুঃখ তুমি করেছিলে দূর/ একটি জাতির জন্য তুমি বেঁধেছিলে সুর’। অপর একটি কবিতা- ‘ মুজিবুর তুমি বাংলার মুখ অমিলন জয়গান/ তুমিই দিয়েছো এই বাঙালিকে স্বাধীনতা সন্ধান/ আমরা কোথায় ডুবেই ছিলাম / সালাম দিয়েছি করাচি – ঝিলাম/ বাংলাকে তুমি একাই করেছো আলোকিত অফুরান ‘।
ইয়াহিয়া খান বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঘৃণ্যতম ব্যাক্তি। তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করার মতো সাহস বাঙালির ছিলো না শুধু একজন ছাড়া শেখ মুজিব। কবি শুকলাল দাশ তার কবিতায় তা দারুণ ভাবে তুলে এনেছেন। তিনি লিখেছেন – ‘খানের ভয়ে সবে অস্থির তুমিই দাঁড়ালে একা/ বাংলার বুকে সেই এক মহা মনীষীর পাই দেখা/ একাই নেমেছো দেশের জন্য / সবাই করেছে ধন্য ধন্য/ আজ তুমি নেই আমাদের চোখে বেদনার জলরেখা’।
পনের অাগষ্ট বাঙালির জাতির ইতিহাসে কালিমাময় দিন। এইদিন স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপদগ্রস্ত, লোভী ও বিদেশিদের দালাল কিছু কর্মকর্তার ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে অর্তকিত হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে। অথচ যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ভঙ্গুর দেশটিকে সোনার বাংলা হিশেবে গড়তে কঠোর পরিশ্রম করছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই দিনের ঘটনায় পুরো জাতি হঠাৎ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
কবি শুকলাল দাশ কবিতায় সেই চিত্র তুলে এনেছেন সফলভাবে – ১) ‘ মুজিব নেই- মুজিব আছে চলছে পথে সাথে / সোনার বাংলা গড়বো ঠিকই হাত ধরেছি হাতে’। ২) ‘ যে আকাশে চাঁদের আলোয় বাড়তো খুশির বেগ/ আজকে দেখো সেই আকাশে খুব জমেছে মেঘ’। ৩) ‘ হারিয়ে গেছো? না না তুমি/ কালজয়ী এক বীর, দেশ ও জাতির জনক তুমি / সকল বাঙালির ‘৪)’জোনাকিরা দেয় না আলো হয় না আঁধার দূর/ মনের ভেতর আর জাগে না নতুন গানের সুর’।
কবি শুকলাল দাশ নিরাশ নন। তিনি মুজিবকে দেখতে পান বাংলার প্রান্তিক মানুষের ভেতর। মুজিবকে তিনি বুকে লালন করে। মুজিবের অার্দশ ধারণ করেন। তাই তিনি লিখেছেন -‘ ফুল পাখি নদী গাঁও সব জুড়ে আছো/ কুলি মাঝি মজুরের গানে তুমি বাঁচো’।
আশা করছি তাঁর কবিতার বইটি অতীতের মতো পাঠক প্রিয়তা পাবে।
গ্রন্থ : মুজিব তুমি ব্রজকণ্ঠ অটল হিমালয়, প্রকাশক : চন্দ্রবিন্দু। মূল্য : ২০০ টাকা।
লেখক-ঃ সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও গল্পকার।