সারাদেশ যখন আক্রান্ত মহামারি করোনার থাবায়। এমন এক দূর্যোগে মানবিক পুলিশ বাহিনী দেখল বাংলাদেশ। বৈশ্বিক মহামারী এ করোনা দুর্যোগে পুলিশের কাছে দেশপ্রেম, ভ্রাতৃত্ববোধ, মানবতা ও মানবিকতা আমাদের শেখা উচিত।
এই মহাদুর্যোগে করেনাকালে আমরা দেখি করোনা তো অনেক দূরের কথা সাধারণ রোগে এবং জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে কেউ মারা গেলে মৃত লাশের আশে পাশে কেউ আসেনা। এ সময় প্রিয়জন, পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায় না তখন খুঁজে পাওয়া যায় পুলিশকে।
কোন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হলে হাসপাতালে পৌঁছে দেয় কে ? পুলিশ। কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে আক্রান্ত ব্যক্তির লাশ দাফনের লোক পাওয়া না গেলেও ঠিকই পুলিশকে পাওয়া যায়।
করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির কবর খনন, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দাফন-কাফনসহ যাবতীয় সব কাজ সম্পন্ন করেকে? পুলিশ।
কেউ যখন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির জানাজায় ইমামতি করতে এবং জানাজায় অংশ গ্রহণ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন,তখন পুলিশ নিজে ইমামতি করেন। জানাজায় অংশ গ্রহণ করে দাফন সম্পন্ন করেন পুলিশ।
ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে প্রতিনিয়ত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন পুলিশ। রাতের আঁধারে পরিচয় গোপন রেখে যারা ফোন দিচ্ছেন, তাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশ।
লকডাউনে ঘরে বাজার নেই,ঔষধ পত্র নেই, খাবার নেই পুলিশ রাতের আধারে গিয়ে আপনার ঘরের বাজার সদায় এবং খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে।
কোনো এলাকা প্রয়োজনে লকডাউন ঘোষণা করলে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে মাঠে ময়দানে কাজ করেন পুলিশ।
এই করোনা সংকটে রাস্তা ঘাটে কোন যান বাহন নেই, কোন রোগী বা গর্ভবতী নারীকে (ডেলিভারি) রোগী যদি হাসপাতালে নিতে হয় তখন পুলিশের গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌঁছে দেয় পুলিশ।
করোনা সংকটে ঘর ভাড়া দিতে না পারলে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াকে ঘর থেকে বের করে দিলে পুলিশ গিয়ে বাড়িওয়ালাকে বুঝিয়ে পরিবারের সদস্যদের মতো আবার বাসায় তুলে দেয় পুলিশ।
করোনা যুদ্ধে কোন রকম সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া ফ্রন্ট লাইনে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছেন পুলিশ।
পুলিশ নিজের পরিবারের প্রিয়জন,প্রিয় মা-বাবা স্ত্রী সন্তানের কথা না ভেবে আমাদের সবার পরিবারের সুরক্ষার জন্য প্রতিনিয়ত সেবা প্রদান করে যাচ্ছে পুলিশ।
যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে সরকারি চাকরিজীবি প্রিয় বাবা মারা গেছে, প্রিয় সন্তানেরা বাবার লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে মৃত্যুর সনদ নিয়ে পেনশনের টাকা নিতে চলে যায়। সন্তানেরা কোনভাবে বাবার নাশ নিতে চাচ্ছেন না ঠিক তখনই ঐ বাবার লাশ পুলিশ গ্রহন করেন।
পুলিশ নিজের বাবার মতো ঐ মৃত্যু ব্যক্তির খবর খনন,দাফন কাফন সম্পন্ন করে।
করোনা সংকটে নিজের পরিবারের সুখ,হাসি খুশি বিসর্জন দিয়ে আপনার পরিবারের হাসি ফোটায় পুলিশ।
এই দুর্যোগে যখন সাধারণ মানুষ লকডাউনে গৃহবন্দি,তখন আপনা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মাঠে ময়দানে কাজ করছে পুলিশ।
পুলিশের ডিউটির কোন কর্ম ঘন্টা নেই, অভারটাইম নেই তবু দেশের মানুষের স্বার্থে রাত দিন ২৪ঘন্টা কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের ওতো পরিবার সন্তান আছে। তাঁরা এক বারোতো চিন্তা করে না, তাঁদের পরিবারের সুরক্ষার কথা। এই দুর্যোগে ঝড তুফানে আপনি যখন বাসায় আরামে ঘুমান তখন রাতের আধারে ঝড়ে ভিজে মশার কামড়ের যন্ত্রণা সহ্য করে আপনার বাসার নিরাপক্তা দিচ্ছেন পুলিশ।
করোনা যুদ্ধে ফ্রন্ট লাইনে সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া যুদ্ধ করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে শহীদ হয়েছেন ঢাকার ওয়ারী থানার পুলিশ কনেস্টবল শহীদ জসিম উদ্দিনসহ ৪পুলিশ সদস্য। স্যালুট আপনাদের বীর শহীদ করোনা যোদ্ধা। আপনারা দেশের এবং পুলিশ বাহিনী গৌরব উজ্জল নক্ষত্র। মানবতা আর মানবিকতার প্রতীক।
এই মহাদুর্যোগে করোনা যুদ্ধে প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে আপনারাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।
এগিয়ে যাক বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। স্যালুট করোনা যোদ্ধা পুলিশ বাহিনীদের। দুঃখের সময়ে বিপদের বন্ধু পুলিশ।
এ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া পুলিশ বাহিনীর বাস্তব কিছু কথা বলে তাঁদের প্রতি ঋণশোধের চেষ্টা করেছি মাত্র।
জয় হোক মানবতার। জয় হোক মানবিকতার।।
লেখক-ঃ স্টাফ রিপোর্টার, বাংলাদেশ টেলিভশন।