নিবন্ধ -ঃ
হে বীর, বিজয়ের মাসে জানাই রক্তিম সালাম
================ উম্মে ফাতেমা।
আজ ১ ডিসেম্বর। শুরু হলো বিজয়ের মাস। এই ডিসেম্বরেই পৃথিবী পেয়েছিলো স্বাধীন বাংলাদেশ আর বাঙ্গালি পেয়েছিল লাল সবুজের পতাকা। তাইতো বাঙালি জাতির কাছে ডিসেম্বর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বীরত্বগাঁথা মাস হিসেবে অক্ষয় হয়ে আছে।
বাঙ্গালি জাতি কোনোদিনও ভুলতে পারবে না মুক্তিযুদ্ধের সেই বীরত্বের কথা, নিজেকে সম্মুখ সমরে বিলিয়ে দেওয়া সেই সব সূর্য সন্তানদের কথা।
কখনো মুছে যাবে না স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বজন হারানোর মর্মবেদনা।কখনো ভূলতে পারবেনা পাকিস্তানি হানাদারের পাশবিক নির্যাতনে সম্ভ্রম হারানো বাংলার মা-বোনদের আর্তচিতকার।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার আকাশে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল দুইশ বছর পর হাজারো সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলার আকাশে আবার উদিত হয়েছিলো সেই অস্তমিত লাল সূর্য।
স্বাধীনতার জন্য এ জাতিকে বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ৩ লক্ষ মা-বোনের পবিত্র সম্ভ্রম ও ৩০ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে জাতি অর্জন করেছে এই স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পেয়েছে লাল সবুজের পতাকাবাহী স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকবাহিনী গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ঐ রাতেই পাক সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির উপর। তারা মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে মেতে ওঠে নৃশংস হত্যাযজ্ঞে। শাসকদের এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ সোচ্চার হয়ে ওঠে। শুরু হয় পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ। এ সময় এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী কিছু কুলাঙ্গার রাজাকার, আলবদর, আল শামস নামধারী বাহিনী পাক বাহিনীর সাথে আঁতাত করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়।
তারা পাক বাহিনীকে নিয়ে নিরীহ মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে মেয়েদের সম্ভ্রমহানী করে।
স্বাধীনতা লাভের আজ ৪৯ বছর পরও সেই কুলাঙ্গাররা এদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করতে চায়না।
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাঙালি ছাত্রজনতা, কৃষক, শ্রমিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, সাহিত্যিকসহ নানা পেশার মানুষ পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে। স্বপ্নের স্বাধীনতার জন্য সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। সারা বাংলাব্যাপী মুক্তিবাহিনীর সাহসী সন্তানদের শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিরোধ যুদ্ধে ধরাশায়ী হয়ে পড়ে পাক বাহিনীর সৈন্যরা।
১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর সর্বাত্মক যুদ্ধে পাক সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করে বাঙালি বীরদের কাছে এবং বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত হয়। অর্জন করে স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চে জন্ম নেওয়া দেশটি ডিসেম্বর মাসেই বিশ্বের মানচিত্রে একটা সার্বভৌম দেশ হিসাবে নিজের স্থান দখল করে।
আজকের এইদিনে অন্তরের অন্তস্থল হতে শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হওয়া ৩০ লক্ষ সূর্য সন্তানদের। সেই সাথে তাদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করি।
লেখক- নাট্য ও সংগীতশিল্পী।
ছবি কৃতজ্ঞতা- মুক্তিযুদ্ধ আর্কাইভ