প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ১২, ২০২৫, ৩:৩১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৯, ২০২০, ১২:১৪ অপরাহ্ণ
গ্রন্থকথা- ওপার বাংলার শক্তিমান লেখক আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাস ও তাঁর লেখনীর কথা

=========== কাজোরী দত্ত ============
সকাল থেকেই সারা বাড়ি জুড়ে গুঞ্জন। ছোট বৌমার ঘরে রাতে পরপুরুষ এর আগমন হয়েছিল। স্বামী বন্ধুর বিয়ে উপলক্ষে অন্যত্র গেছেন। সেই সুযোগে এই দুষ্কর্ম। ক্রমে গুঞ্জন শোরগোলে পরিণত হয়। ইতোমধ্যে স্বামীও ফিরে এসে এমন অভিযোগ শুনে স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন, স্বামীর অনুপস্থিতিতে কেন তিনি পরপুরুষকে ঘরে প্রবেশাধিকার দিলেন ?
এতক্ষণ ছোটবৌমা নিরুত্তর ছিলেন। আশা ছিল, স্বামী এসে এই মিথ্যা অভিযোগের উপযুক্ত জবাব দেবেন। যখন স্বামীও বিশ্বাস করলেন এই মিথ্যাকে; এত দিনের দাম্পত্য সম্পর্কের বিশ্বাসের ভিত ধূলিসাৎ হ'ল, মেয়েটি আর সহ্য করতে পারলেন না।
বড় জা এই মিথ্যার যবনিকা উন্মোচন করতে অনুরোধ জানালে, মেয়েটি বলল, এতদিনের চেনা মানুষকে যারা বিনা প্রশ্নে চরিত্রহীন বলে ভেবে নিতে পারে,তাদের সংসারে সে আর থাকবে না।এদের কৈফিয়ৎ দেবার দায়ও নেই তার। তার বিপ্লবী ভাইকে রাতে কয়েক ঘন্টার জন্য আশ্রয় দেবার সিদ্ধান্তের পরিণামে তাসের ঘরের মত ভেঙে গেল পারিবারিক ও ব্যক্তি সম্পর্ক।
'তাসের ঘর' শীর্ষক গল্পটি লেখা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। এই শক্তিমান সাহিত্যািক পাঠক নিশ্চয় অনুমান করতে পারছেন ? সত্যবতীর পূর্বসূরী এই মেয়েটিও আশাপূর্ণাদেবীর ই সৃষ্টি।
১১০ বছর আগে এই ধরাধামে অবতীর্ণ হয়ে স্কুলে পড়ার সুযোগ না পেয়েও নিজের প্রচেষ্টায় বাংলা সাহিত্য জগতের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।
দাদাদের পড়ার টেবিলের উল্টোদিকে বসে বর্ণমালা শিখেছিলেন ব'লে শিশুকালে উল্টো ক'রে লিখতেন। অচিরেই নিজের সোজা পথ চিনে নিয়ে তেরো বছর বয়স থেকে কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে সাহিত্যের অঙ্গনে প্রবেশ করলেন।
জীবনের প্রায় শেষদিন পর্যন্ত তাঁর কলম ছিল সচল। সাহিত্যে যেমন উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন,ব্যক্তিগত জীবনেও তেমন ই ছিলেন।
গামছা পরিধান ক'রে নিজের শাশুড়িকে নিরামিষ রান্না ক'রে দিয়েছেন; আবার পুত্রবধূর পি.এইচ ডি প্রাপ্তির খুশিতে বিখ্যাত চীনা রেস্তোঁরায় খাইয়েছেন বৌমার সহকর্মীদের। তাঁর বাড়িতে অতিথিদের মধ্যাহ্ন বা নৈশভোজে আপ্যায়ন করতে খুব ভালোবাসতেন।
মানুষের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণের অসাধারণ ক্ষমতা ছিল আশাপূর্ণা দেবীর। 'ছায়াসূর্য' উপন্যাস টির কথা মনে পড়ে এ প্রসঙ্গে। মানবিকতা যে সামাজিক আচারের ঊর্ধ্বে এ কথা আচার সর্বস্ব সমাজকে তিনিই শিখিয়েছিলেন।
অনাচার গল্পের সুভাষ কাকীমা বৈধব্যবেশ ধারণ করেন নি,শ্বশুর মহাশয়কে পুত্রশোক দেবেন না বলে। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। এই মানবিকতার যথার্থ মূল্যও তিনি পান নি। সবার কাছে নিন্দিত ই হয়েছেন। তিনি আশাপূর্ণা দেবী। যার কথা যত ই বলি,আরো বলতে মন চায়...। বিনম্র শ্রদ্ধা তাকে।
লেখক-ঃ এডমিন। মধ্যমগ্রাম আমার তোমার
মধ্যমগ্রাম, কলিকাতা পশ্চিম বঙ্গ।।
Chief Adviser : Prof. Partha Sarathi Chowdhury. Chairman : Manas Chakroborty. Head Office: 40 Momin Road, Chittagong. Editorial Office: Farid Bhaban (2nd floor), in front of Hajera Taju Degree College, Chandgaon, Chittagong. News Desk : Email : chattobanglanews@gmail.com, Hello : 019-2360 2360
Copyright © 2025 চট্টবাংলা. All rights reserved.