এম. জাবেদুর রহমান। চট্টবাংলা ডট কম-ঃ
অস্তিত্ব সংকটে পড়ে আজ বিলুপ্তির পথে পটিয়া উপজেলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্প অর্থাৎ মাটির তৈরি জিনিসপত্র।
সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, মাটি ও উপকরণ সংকট, তৈরি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় লাভজনক না হওয়ায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশের এক সময়ের চিরচেনা মৃৎশিল্প। হারিয়ে গেছে মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজানোর দোকান।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পটিয়াস্থ অলিরহাট এলাকার মৃৎশিল্প কারিগর কুমার সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর সদস্যদের মাঝে চলছে নানা অভাব-অনটন ও চরম হতাশা। তাদের তৈরি মাটির পণ্য এখন বাজারে বিক্রি না হওয়ায় বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার জীবন চিত্র।
জানা যায়, পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের অলীরহাট এলাকার রুদ্রপাড়ায় এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল প্রায় শতাধিক পরিবার। বর্তমানে হাতেগোনা ৫-৬ পরিবার কোনো রকমে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে মাটির তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করছে।
কুমার পরিবারের সদস্যরা হাট-বাজারে, দোকানে ও মেলায় বিক্রি করার জন্য আগে থেকেই তৈরি করে রাখত মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, ছোট ছোট পুতুল ও খেলনা।
প্রাচীনকালে মৃৎশিল্পের খ্যাতি ছিল দেশজুড়ে। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, চীনামাটি, মেলামাইন এবং বিশেষ করে সিলভারে রান্নার হাঁড়ি কড়াই প্রচুর উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।
এক সময়ে পটিয়ার অলিরহাটের রুদ্রপাড়া (কুমার পাড়া) ছিল মাটির তৈরি পণ্যসামগ্রীর সমাহার। বিভিন্ন হাটে-বাজারে ছিল মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিলসহ অন্যান্য সামগ্রীর দোকান। কিন্তু পটিয়ায় এখন কুমারদের আর হাঁড়ি-পাতিলের দোকান নেই। এখন তারা ঘরে তৈরির পর সেখান থেকে ক্রেতারা এসে নিয়ে যায়।
অলিরহাটের রুদ্রপাড়ার (কুমারপাড়া) বাসিন্দা মৃৎশিল্প কারিগর রাখাল রুদ্র জানান, তাঁর বাপ-দাদারা যুগ যুগ ধরে এ পেশায় যুক্ত ছিল। আমি এ পেশা ছাড়া অন্য কোনো কাজ শিখিনি তাই বাপ-দাদার এ পেশা আঁকড়ে ধরে আছি। বাপ-দাদাদের শেখানো কাজ টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি এনে নানা ধরনের ব্যবহার সামগ্রী বানিয়ে এবং তা হাটে-বাজারে বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করতে ছিলাম। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের ফলে এসব পণ্য আজ হারিয়ে গেছে। প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, চীনামাটি, মেলামাইনসহ আধুনিক পণ্যসামগ্রী পাওয়ার পর মাটির তৈরি সামগ্রী আর কেউ নিতে চায় না, বিক্রিও তেমন হয় না। তদুপরি যে পরিমাণ মজুরি ও খরচ পড়ে সে অনুযায়ী দাম পাওয়া যায় না। আবার রয়েছে মাটির স্বল্পতা। নেই সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। এ কারণে এখানকার শতাধিক পরিবার এখন এ পেশা ছেড়ে দিয়েছে। মাত্র ৪-৫ টি পরিবার নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কুমার সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশাটি আঁকড়ে রয়েছেন।
অলির হাটের কুমার পরিবারের সন্তান পলাশ রুদ্র জানান, এক সময় পাড়ার অর্ধশতাধিক পরিবার এ পেশায় যুক্ত ছিল। তাদের ঘরে ঘরে মাটির তৈরি ব্যবহার সামগ্রী তৈরি হতো। প্রতিবছর মাঘ মাসে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন মেলায় তারা এসব পণ্য বিক্রি করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত। এখন মেলা না হওয়ায় মাটির তৈরি জিনিস বিক্রি হয় না। তাই এ পেশায় টিকে থাকা যাচ্ছে না।
বর্তমানে বদলে যাওয়া পৃথিবীতে প্রায় সবাই নতুন রূপে বাঁচার পথ খুঁজে নিয়েছে। নতুন সাজে আবার নতুনভাবে মাটির তৈরি সামগ্রী মানুষের কাছে ফিরে এসেছে। শুধু গ্রামে নয় শহরের শিক্ষিত সমাজও মাটির তৈরি জিনিস ব্যবহার করছে, তবে তা বিচিত্ররূপে। এখন মানুষের রুচি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিত্যনতুন রূপ দিয়ে মৃৎশিল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য কুমার শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে মাটির তৈরি এসব পণ্যের প্রদর্শনী করা প্রয়োজন।
Chief Adviser : Prof. Partha Sarathi Chowdhury. Chairman : Manas Chakroborty. Head Office: 40 Momin Road, Chittagong. Editorial Office: Farid Bhaban (2nd floor), in front of Hajera Taju Degree College, Chandgaon, Chittagong. News Desk : Email : chattobanglanews@gmail.com, Hello : 019-2360 2360
Copyright © 2025 চট্টবাংলা. All rights reserved.