প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ৭, ২০২৪, ১০:২৮ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০, ২:৩১ অপরাহ্ণ
প্রবন্ধ-ঃ জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত : গদ্যের কারিগর ==================== রাজীব রাহুল।
জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত (১৯৩৯), যিনি গল্পে জীবনের বাইরে দাঁড়িয়ে জীবনটাকে দেখার চেষ্টা করেন। গল্পের স্বাতন্ত্র্য ভাষা,অভিনব প্রকাশ ভঙ্গি, সাঙ্কেতিক বা গণিতের ধাঁধার মতো গল্প উপস্থাপনার কৌশলের কারণে তাকে বাংলা সাহিত্যের স্বতন্ত্র ধারার গল্পকার বলা যায়। গল্পের কাব্যিক ব্যঞ্জনার জন্য আধুনিক ছোটগল্পের কবি হিসেবেও পরিচিত তিনি ।
গল্পের নামকরণ ও গদ্য ঢংয়ে তার গল্পগুলো আধুনিক কবিতার পিঠে সাঁতার কাটতে চায়। কলেজ জীবনের প্রথম বছর থেকেই তাঁর গল্প লেখা শুরু। শুধু শিল্পের জন্য শিল্পসৃষ্টি নয়। জীবনের জন্যে শিল্পসৃষ্টিই মুখ্য মনে করেন তিনি। ষাটের দশকের প্রথম দিকে তাঁর লেখা গল্প ' একজন পুরুষ চাই' অনেকটা সাহস করেই নিজের সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় ছেপেছিলেন সিকান্দার আবু জাফর। দেশে তখন সামরিক শাসন জারি ছিলো। সে সময়ে স্পষ্ট করে প্রচলিত রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে কিছু বলা সহজ ছিলো না মেটেই।
গল্পটিতে উপার্জনহীন,অক্ষম মধ্যবয়স্ক পুরুষ যে কিনা মার খেয়ে ঘরে বসে আছে। তার দুর্দশার শুরু হয় দেশভাগের জন্য। মূলত নিয়তি নয়, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সমাজের মানুষের উপর যে বিশ্বাস চাপিয়ে দেয়। তার গল্প নিয়ন্ত্রণ করেছে চাপানো বিশ্বাসের ভিন্ন মতের বিশ্বাস। তিনি মনে করেছেন ভাষার ভিন্নতা ছাড়া সেইসব সময়ে এইরকম গল্প লেখা সহজ ছিলো না। গল্পটা ছিলো অ্যাবষ্ট্র্যাকশন ও রিয়ালিটির।
বাংলাদেশী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস-কমিউনিকেশনে মাষ্টার্স শেষে যিনি সাংবাদিকতায় প্রথম পিএইচডি করেন প্রখ্যাত ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরিত থেকে । তারপর দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির জন্য ঘুরেছেন সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে জায়গা হয়নি কোথাও। এমনকি প্রেস ইনস্টিটিউটেও। এমনকি ধানমন্ডিতে নিজের বাড়ীটি দখল করে নিয়েছিলো খানকা শরীফ। এই কষ্টগুলো তার আশি থেকে ছিয়ানব্বুই সময়ের কথা। এই বৈষম্যের কথাগুলো তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় গল্পগ্রন্থে ওঠে এসেছে।
জ্যোতি প্রকাশ দত্তের গল্প রচনার সময়কে দুইভাগে ভাগ করা যায়। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ এবং মাঝখানে বিরতি নিয়ে আবার ১৯৮৮ থেকে এখন অবধি যা লিখে চলেছেন। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে তিনি প্রকাশ করেন ' দুর্বিনীত কাল (১৯৬৫), বহে না সুবাতাস (১৯৬৫), সীতাংশু, তোর সমস্ত কথা' (১৯৬৯) নামের গল্পগ্রন্থ । তার লেখা 'দিন ফুরানোর খেলা' আমৃত্যু আজীবন ' শূন্য গগনবিহারী' কালপুরুষ' গল্পগুলো মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা। কিন্তু এই গল্পগুলোতে অস্ত্র, সংঘাত, অত্যাচার, আগুনের মতো কোন প্রসঙ্গ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে গল্প পড়ার শেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেম জেগে ওঠে।
কেষ্টযাত্রা গল্পটি পড়ে দুমড়ে মুচড়ে যাননি এমন পাঠক পাওয়া যাবেনা। গল্পটিতে কেষ্টবাবু ও তার ছেলে সুখেন যাত্রা পথেই গল্পকার তার মূলকথাগুলো বলে ফেলেছেন। কেষ্টবাবু যদিও নিয়তি তাড়িত মানুষ নন। কারণ নিয়তি তাড়িত মানুষের দেনা থাকে না। নিয়তিই যার জীবন নিয়ন্ত্রণ করে না। তাকে জীবন গড়ে নিতে হয়। সেই জীবন গড়তে না পারায়ই তার দেনা। এই দেনা তার সংসারের কাছে। পুত্র সুখেনের কাছে। কিন্তু তারও তো কারো কারো কাছে পাওনা ছিলো।
যে পাওনা থেকে তাকে বঞ্চিত করেছে সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। মানুষ কেষ্টবাবুর কাছে পাওনাটাই দেখে কিন্তু কখনো তাঁর যে পাওনা আছে, সে হিশেব কষে দেখে না কখনোই।
লেখক-ঃ সাংবাদিক, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক
সম্পাদক- কথাস্বর (সাহিত্যের ছোট কাগজ)
Chief Adviser : Prof. Partha Sarathi Chowdhury. Chairman : Manas Chakroborty. Head Office: 40 Momin Road, Chittagong. Editorial Office: Farid Bhaban (2nd floor), in front of Hajera Taju Degree College, Chandgaon, Chittagong. News Desk : Email : chattobanglanews@gmail.com, Hello : 019-2360 2360
Copyright © 2024 চট্টবাংলা. All rights reserved.