অভি পাল,প্রতিনিধি
বিশ্বজগতে অনন্ত কালপ্রবাহে মানুষের জীবন নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী। এ ক্ষণস্থায়ী জীবন মহিমা পেতে পারে মানুষের মহৎ কর্মে ও অবদানে। তখন মৃত্যুর পরও মানুষ স্মরণীয় হয়ে থাকে। তাই বয়স মানুষের জীবনের সার্ধকতর মাপকাঠি নয়, মহৎ কীর্তির মাধ্যমেই মানুষের জীবন সফল ও সার্থক হয়।জীবদ্দশায় দেশ ও মানুষের কল্যানে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে মৃত্যুর পর স্মরণীয় হয়ে আছেন অনেক কীর্তিমান। তেমনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান উল কবির চৌধুরী।
যিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন।
আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে লালদীঘি মাঠে জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় আগমন কালে পুলিশ ও বিডিয়ারের নির্বিচার গুলিতে নেত্রীর জীবন রক্ষায় অনেকে নিহত এবং আহত হন। সেখানে সুলতান উল কবির চৌধুরী জীবন বাজি রেখে নেত্রীকে বাঁচানোর কথা জনমুখে মুখে।
সুলতানুল কবির চৌধুরী ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
সুলতানুল কবির চৌধুরী ১৯৭২ সালে যুবলীগের চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।ছয় মাস জেল খাটার পর তিনি মুক্তি পান।
সুলতানুল কবির চৌধুরী ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।সেই সুবাদে তিনি বাঁশখালীতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন। তাঁর সময়কালে ছিল না দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি। তিনি দৃঢ়তার সাথে বাঁশখালী থেকে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন ছিলেন । ১৯৯৯ সালে তিনি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামে যারা ছাত্রলীগ-যুবলীগকে সংগঠিত করেছেন সুলতান উল কবির চৌধুরী তাদের মধ্যে একজন। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়েও কারাবরণ করেন। শিকার হন চরম নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুট আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি কখনও।
যিনি মিটিং-মিছিল ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার অধিকার সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ইতিহাসের অংশ হয়ে আছেন। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে সবসময় তিনি সক্রিয় ছিলেন। সময়ের সাহসী সন্তান সুলতান উল কবির চৌধুরী সেদিন রাজপথে স্বৈরাচারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গনতন্ত্র মুক্তি পাক’ শ্লোগান বুকে ধারণ করে আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
সুলতানুল কবির চৌধুরী ছিলেন জমিদার পরিবারের সন্তান। পৈত্রিক সূত্রেই পান বিশাল সম্পত্তি।ধর্নাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও অসহায় মানুষের পাশে ও কাছে থেকে সুলতানুল কবির চৌধুরী মৃত্যুর পরও অনেকের মাঝে অনন্য হয়ে আছেন।ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের সাথে মিশে যেতেন খুব সহজেই। মানুষকে বুকে টেনে নিতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত।তিনি ছিলেন অসহায়, নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন আপোষহীন ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মৃত্যুতে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না-ফেরার দেশে, অনন্তলোকে তিনি।
তার মৃত্যুতে দেশ হারিয়েছে ক্ষণজন্মা এক রাজনীতিবিদকে। আওয়ামী লীগ হারিয়েছে দলের একজন সততার মূর্ত প্রতীক নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে।
আজ (৩০ জুন) তাঁর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৪ সালের এই দিনে ঢাকার গুলশানের বাসভবনে ইন্তেকাল করেন তিনি।
Chief Adviser : Prof. Partha Sarathi Chowdhury. Chairman : Manas Chakroborty. Head Office: 40 Momin Road, Chittagong. Editorial Office: Farid Bhaban (2nd floor), in front of Hajera Taju Degree College, Chandgaon, Chittagong. News Desk : Email : chattobanglanews@gmail.com, Hello : 019-2360 2360
Copyright © 2025 চট্টবাংলা. All rights reserved.