প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ১২, ২০২৫, ৩:৩৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০, ১২:২২ অপরাহ্ণ
![]()
প্রকৃতির একটা নিজস্ব রূপ আছে। আর সে রূপ হলো সতেজতা। যখন প্রকৃতি তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে, তখন এটি বিরূপ আকার ধারণ করে। কখনো সিডর, আইলা, ফণীর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং প্লেগ, বসন্ত ও করোনার মতো মহামারি দিয়ে। এগুলো এক কথায় বলা যেতে পারে প্রকৃতির প্রতিশোধ।
মানুষ যেমন গাছ কেটে, কার্বেন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি করে, পানি দূষণ করে, পারমাণবিক বোমা বানিয়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে, তেমনি কালে কালে প্রকৃতিও করোনার মতো মহামারি দিয়ে মানুষ নিধন কর্মসূচি চালায়। এটি আসলে ইটটি মেরে পাটকেলটি খাওয়ার মতো। এতে প্রকৃতির কোন দোষ নেই।
এইতো কয়েক দিন আগের কথা, সংবাদে দেখা গেলো, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টের কাছে ডলফিনের দুটি দলকে খেলা করতে। দুটি দলে মোট ২০/২৫টা ডলফিন আছে। ৩ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি আমাদের সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। স্থানীয়দের মতে, গত তিন দশকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এভাবে ডলফিন খেলা করতে দেখা যায়নি। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটক কিংবা স্থানীয়দের নামতে দেওয়া হচ্ছে না, ফলে কমে গেছে দূষণ, আর দূর হয়েছে সামুদ্রিক জীবদের চলাচলের অসুবিধা। এতে করে সমুদ্র তার সন্তানদের ফিরিয়ে দিতে পেরেছে নিজস্বতা। ডলফিন তার বাচ্চাদের নিয়ে আনন্দে মেতে মানুষকে যেন বলতে চাইছে, " দেখো এটা কিন্তু আমাদের জায়গা, তোমরা আমাদের বিরক্ত করতে এসো না "।
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের আতঙ্কে নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। রাস্তায় নেই গণপরিবহণ, নেই লোকারণ্য। করোনা প্রতিরোধে সরকারী নির্দেশনায় মানুষ হয়ে পড়েছে গৃহবন্দী। তাই প্রকৃতিতে কমেছে দূষণের মাত্রা। বিশ্ব প্রকৃতি আস্তে আস্তে ফিরে পেতে শুরু করেছে তার নিজস্ব রুপ। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে জলকেলি খেলছে ডলপিনের দল। সৈকতে নিশ্চিন্তে ডিম পাড়ছে লাখ লাখ অলিভ রিডলে কচ্ছপ।
জনমানবশূন্য রাস্তায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে বুনো হরিণ, নীলগাই ও বিরল প্রজাতির সিভেট। নাগরিক দৃশ্যপট থেকে যে পশুপাখি বহুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল সেই পশুপাখি যেন আবার নিজেদের জায়গা ‘ফিরে পেতে’ হাজির হয়েছে। মানুষের মৃত্যু বিষাদের মধ্যে প্রকৃতিতে ফিরেছে প্রাণ। তবে সৈকত খালি হওয়াতে দূষণ কমে গেছে। অনুকূল পরিবেশ পেয়ে আবারো ফিরে আসছে ডলফিনরা। বালিয়াড়িতে ফুঠছে সবুজ লতা-পাতা।
এদিকে দ্য গার্ডিয়ান বলছে, করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত ইতালির ভেনিসের সমুদ্রতীরে বিশাল ক্রুজ শিপগুলো এখন আর এসে ভিড়ছে না। ফলে ভেনিসের ক্যানালগুলোতে আবার ডলফিন এসে খেলে বেড়াচ্ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতও বন্ধ থাকায় সেখানে ডলপিন ঝাঁকে ঝাঁকে লাফালাফি করছে।
জাপানের নারা শহরের জনশূন্য রাস্তায় বিরল শিখা হরিণের দেখা মিলেছে। পানামার সান পেলিপে শহরের সমুদ্রসৈকতের তীরে দেখা গেছে মাংসাশী প্রাণী রিকনের একটি দলকে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ওকল্যান্ডের একটি স্কুলের মাঠে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে টার্কি মুরগির ঝাঁক। থাইল্যান্ডের লোপবুরি শহরে পর্যটকদের আনাগোনা নেই। এই সুযোগে সাবওয়েগুলো দখলে নিয়েছে বানরের দল।
ভারতের রাস্তায় গাড়িঘোড়া নেই, মানুষের চলাচল নেই, দোকানপাট বন্ধ। ফলে পশুপাখি বহু দিন পর আবার স্বমহিমায় ফিরে এসেছে। ভারতীয় ফরেস্ট সার্ভিসের এক তরুণ কর্মকর্তা সুশান্ত নন্দা গত কয়েকদিন ধরে তার টুইটার থেকে অবিরত পোস্ট করে চলেছেন এমনই অসাধারণ সব ছবি, যা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে।
অনুপ্রাণিত হয়ে গৃহবন্দি অনেক ভারতীয়ও তাদের ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে দুষ্প্রাপ্য প্রাণীদের আনাগোনার ছবি পোস্ট করতে শুরু করেছেন। লকডাউনের কারণে উড়িষ্যার উপকূলে অলিভ রিডলে কচ্ছপগুলো মানুষের নজর এড়িয়ে অনেক শান্তিতে ডিম পাড়তে পারছে। গহিরমাথা আর ঋষিকুল্যা সৈকতজুড়ে এবার প্রায় আট লাখ কচ্ছপ এসেছে, যার অর্থ ভারতের সমুদ্রতটে প্রায় ছয় কোটি অলিভ রিডলের ডিম।
কেরালার কালিকটের বন্ধ বাজারের মধ্যে একটি সিভেটকে রাস্তার মাঝখানে দেখা গেছে।উত্তরাখন্ড রাজ্যের দুই ব্যস্ত শহর হরিদ্বার আর দেরাদুনের বেশ কাছেই রাজাজি ন্যাশনাল পার্ক। লকাডাউনে সবকিছু যখন সুনসান, হাইওয়েগুলো স্তব্ধ তখন সেই অভয়ারণ্য থেকে হাঁটতে হাঁটতে একপাল বড় শিংওয়ালা হরিণ চলে এসেছিল হরিদ্বার শহরে।
প্রকৃতির কাছ থেকে কিছু শিক্ষা মানুষকে নেওয়া উচিত। তাতে জীবন চলার পথটাকে অনেকটাই সহজ অকৃত্রিম মনে হবে।
চট্টগ্রাম। ৩০ মার্চ ২০২০। সোমবার।
লেখন-ঃ সাংবাদিক, সংগঠক ও সমাজ কর্মী।
Chief Adviser : Prof. Partha Sarathi Chowdhury. Chairman : Manas Chakroborty. Head Office: 40 Momin Road, Chittagong. Editorial Office: Farid Bhaban (2nd floor), in front of Hajera Taju Degree College, Chandgaon, Chittagong. News Desk : Email : chattobanglanews@gmail.com, Hello : 019-2360 2360
Copyright © 2025 চট্টবাংলা. All rights reserved.