প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ১৪, ২০২৫, ১১:১০ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১২, ২০২০, ২:৪৩ অপরাহ্ণ

একজন অভিভাবক তাঁদের প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে নিয়ে দারুণ উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মাঝে পার করে তাঁদের দিন রাত্রি। যেন কন্যাকে পাত্রের হাতে সমর্পণ করতে পাড়লেই মানসিক স্বস্তি খুঁজে পাই।
আর তাই বিয়ের বাজারে কতবারযে পাত্র পক্ষের সামনে সাঁজগোঁজ করে বসতে হয় তা একমাত্র ভুক্তভোগী মেয়েই জানে। পাত্র পক্ষের জেরার মুখে নিজের অনিচ্ছায় বলতে হয়- বাটনা বাটা থেকে উনুনে ভাত চড়ানো পর্যন্ত আদ্যপ্রান্ত। বাদ যায়না মডেলদের মতোই চুল খোলা, দাঁত-নক আর হেটে দেখানোর কৌশলও। কিন্তু পাল্টে গেছে সমীকরণ। পাল্টেছে সময়। পাল্টে গেছে তাই নিয়মের সীমানাও। এখন শুধু নারী মানে হেঁসেলে বন্ধী কিংবা পুরুষের বাহু বন্ধনী হয়ে থাকা নয়। এখন নারী মানে সম্ভাবনার আগামী। আজ নারী মানে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগামীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার আরেক নাম। এইতো সেদিন এক মেয়েকে পরিবার থেকে বলা হল, আজ তাকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে। তার পরিবারের সকল সদস্য আয়োজনে ব্যস্ত। পারলে আজকেই যেন বিয়ের কাজটা সেরে ফেলে। সন্ধ্যায় ছেলে সমেত তার পুরো পরিবার মিলে ২৭জন মানুষ এলো একজন মাত্র নারী বা বিবাহ যোগ্য পাত্রীর যোগ্যতা যাচাই এর গুরুদায়ীত্ব নিয়ে। ব্যাপারটা এমন যেন, পেশীশক্তির বলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করতেই এই যোগাড় যন্ত্র।
পরিচয় পর্ব শেষে। ছেলেপক্ষ মেয়ের বাড়ির ছাদ। পাখার ডানা। দরজার চৌকাঠ। পর্দার রং। ফার্নিচার এর বয়সকাল। বাড়িতে মোট রুমের
সংখ্যা। ফ্রিজের ব্রান্ড ও তার উচ্চতা। টিভির ইঞ্চি পরিমাপ এবং সিলিং ফ্যানের গতি পরিক্ষা করতে লাগলেন। এরই মধ্যে ছেলে পক্ষের একজন মহিলা সদস্য ওয়াশরুম খুজতে লাগলেন। তিনি ওয়াশরুমের ভ্যান্টিলেটর, টুথ ব্রাশের ব্র্যান্ড ও তার মেয়াদকাল, কতখানি পরিষ্কার, কতখানি নোংরা, টাইলস আছে কি নেই এসব নিরীক্ষার দ্বায়িত্ব নিলেন। এদিকে পাত্রী ভারী গহনা এবং চকচকে শাড়ী পড়ার প্রস্তাব। পাত্রী আধুনিক মেয়ে এসব নাকোচ করে দিল। এমনকি স্পষ্ট জানিয়ে দিল সে মাথায় ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচু করে ছেলেপক্ষের সামনে যাবেনা। কারন সে কোন প্রজেক্ট নয়, যাকে পরিবেশন করে কন্ট্রাক্ট ফাইনাল করবে, তার যুক্তি... যেহেতু এটা এখনো নিশ্চিত নয় যে এই ছেলেই আমার স্বামী। সুতরাং তাকে অতিরিক্ত সম্মানে আখ্যায়িত করার মানে হয়না।
আধাঘণ্টা পর, ডাইনিং টেবিলে ৩৩ রকমের খাবার দেয়ার পরও, তাদের কাছে কমতি মনে হল,খাবার টেবিলে এমন একটা ভাব যেন
এমন রাজভোগ তাদের বাড়িতে সকাল সন্ধ্যায় হয়। কেউ বলছেন মিষ্টি খাবেন না ডায়াবেটিস প্রবলেম। কেউ ঝাল খাবেন না গেস্ট্রিক প্রবলেম। কারো টন্সিল প্রবলেম তাই ঠান্ডা খাবেন না। কেউ আবার গরম খেতে পারেন না।
ঘন্টাখানেক পরে মেয়ে দেখানোর পালা শুরু হয়, এর মাঝেই কানাকানি শুরু, একটু ভালো জামা কাপড় পড়ায়নি। মাথায় কাপড় নেই। গায়ে কোন
গয়না নেই...। ইত্যাদি ইত্যাদি। ঠিক যেন প্রোডাক্ট এ মনমতো লেভেল লাগানো হয়নি।
এবার প্রশ্নের পালা শুরু...। পড়াশুনা কতটুকু। হাইট কত,ভাই বোন ক'জন। এটাকি নিজের বাড়ি নাকি ভাড়া বাড়ি। বাবা কি করেন, বংশে
কেউ সরকারি চাকরি করেন কিনা। এমন কি প্রশ্নের ধরন এমন ও ছিলো এ বাড়ির মহিলারা বাজার করেন কিনা।
যাবতীয় প্রশ্নের জবাব শেষে এবার পাত্রীর প্রশ্নের পালা যা ছিলো এমন...
পাত্রীঃ আপনারা বাসে এসেছেন না ট্রেনে?...
পাত্রঃ কেন?
পাত্রীঃ না অনেক লোকজন তো, তাই, এত লোক তো গাড়ীতে জায়গা হবার কথা নয়। যাই হোক গাইতে পারেন?
পাত্রঃ আমার গলা ভালোনা।
পাত্রীঃ কন্ঠনালীর ব্যাপারে জানতে চাইছিলাম, গলার ব্যাপারে নয়। আচ্ছা গীটার বাজাতে পারেন?
পাত্রঃ আসলে শেখা হয়নি।
পাত্রীঃ আমার আশেপাশের সব ছেলেই তো পারে, তাই জিজ্ঞাসা করলাম
পাত্রীঃ কবিতা লেখেন?
পাত্রঃ না।
পাত্রীঃ মাউন্টেন ক্লাইম্ব, মানে পাহাড় জয়ের ইচ্ছা আছে?
পাত্রঃ ভাবিনি কখনো।
পাত্রিঃ স্যুটিং করেছেন কখনো, গল্ফ খেলেছেন?
পাত্রঃ না।
পাত্রিঃ পুল খেলতে পারেন?
পাত্রঃ না।
পাত্রিঃ ডাক্তার হতে ইচ্ছে করেনি কখনো? বা ইঞ্জিনিয়ার?
পাত্রঃ আসলে, সুযোগ ছিলো না।
পাত্রীঃ নাচতে পারেন।
পাত্রঃ (লজ্জায় লাল হয়ে) না।
পাত্রীঃ ফুটবল খেলেন নিশ্চয়,নাকি ক্রিকেট?
পাত্রঃ না, সময় হয়না।
পাত্রীঃ রাঁধতে পারেন?
পাত্রঃ এটাতো মেয়েদের কাজ।
পাত্রীঃ তাই নাকি, মেয়েদের হার্ট থ্রব "সন্জীব কাপুর" খুব ভালো রাঁধতে পারে, টিভি দেখেন নিশ্চয়? আপনার তো জানার কথা।
পাত্রঃ আসলে টিভি দেখার সময় পাইনা।
পাত্রীঃ হিন্দি বোঝেন, বলতে পারেন?
পাত্রঃ না।
পাত্রীঃ তাহলে তো সমস্যা, আপনি তো তাহলে রোমান্টিক মুভিও দেখেন না।
পাত্রীঃ দেশের বাইরে ঘুরেছেন কোথাও ?
পাত্রঃ না, আসলে যাওয়া হয়নি কখনো।
পাত্রীঃ কি সর্বনাশ... নিজেই কিছুই দেখেন নি, আমাকে দেখাবেন কি করে?
পাত্রীঃ শিকার করেছেন কখনো, বেয়ার গিল কে চেনেন?
পাত্রঃ না।
সবশেষে পাত্রী দাঁড়িয়ে বললো আপনার এক্সট্রা কারিকুলামে বেশ সমস্যা আছে। ঠিকমত প্রস্তুত হয়ে আগামী বছর চেষ্টা করুন, আমার বিশ্বাস আপনি পারবেন...।
প্রিয় পাঠক। পাত্র-পাত্রীর ইন্টারভিউটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। শুধু একটা কথাই বলতে চাই, মেয়েরা পণ্য না যে তাদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরিক্ষা করতে হবে। মেয়ে দেখতে গিয়ে সেই মেয়েটাকে মানসিক ভাবে মেরে ফেলার কোনো মানে হয় না।
বদলে যাওয়া সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে আজ বাংলার নারী। তাই সময় এসেছে নারীকে শুধু নারী না ভাবার। এগিয়ে যাক নারী শক্তি। তাহলেই সুন্দর এক আগামীর সন্ধান পাবে আগামীর বিশ্ব।
Chief Adviser : Prof. Partha Sarathi Chowdhury. Chairman : Manas Chakroborty. Head Office: 40 Momin Road, Chittagong. Editorial Office: Farid Bhaban (2nd floor), in front of Hajera Taju Degree College, Chandgaon, Chittagong. News Desk : Email : chattobanglanews@gmail.com, Hello : 019-2360 2360
Copyright © 2025 চট্টবাংলা. All rights reserved.